ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘ছুটি ব্যক্তিগত বিষয়’, ‘প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগে ছুটি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৭
‘ছুটি ব্যক্তিগত বিষয়’, ‘প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগে ছুটি’ মাহবুবে আলম-অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

ঢাকা: ‘প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘আমরা জানি, তিনি ক্যান্সারের রোগী। আগেও তার ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়েছে।

কাজেই এটি (ছুটি) সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিষয়’।
 
মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন জয়নুল আবেদীন। আর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মাহবুবে আলম।
 
সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪ সদস্যের মধ্যে ১৩ জন প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে জরুরি সভা করেন।
 
এরপর সভাপতির কার্যালয়ের সামনে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের আইনজীবী সমিতি মনে করে, তার (প্রধান বিচারপতির) ওপরে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তিনি যেন একমাসের জন্য ছুটিতে চলে যান। আপনারা জানেন, জাতি জানে, সারা পৃথিবীর মানুষ জানে যে, একটি রায়ের পরে তাকে একটি রাজনৈতিক দল ও সরকার বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছিলো। আমরা মনে করি, সে চাপের অংশ হিসেবে সোমবার (০২ অক্টোবর) তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি ছুটিতে যেতে চাননি এবং তাকে বাধ্য করা হয়েছে’।
 
তিনি বলেন, ‘এদেশের মানুষের সর্বোচ্চ আশা-ভরসার স্থল হচ্ছে এই সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, এখানেও যদি সরকারের হস্তক্ষেপ হয়, তাহলে সেটি জাতির জন্য দুঃখজনক। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না, সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে সভা করে পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা জানাবো’।
 
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ‘এজন্য সমিতির সভায় সকলের বক্তব্য শোনা হয়েছে। সবশেষে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আমরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কেন, কি কারণে, কি চাপে, কিজন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন এবং কেন তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সঙ্গে কোনো কথা না বলে এ অঙ্গনে সকালে (সোমবার) এসে একটা সময় তিনি ত্যাগ করেছেন। এগুলো আমাদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির জানার অধিকার আছে’।
 
‘কেননা, তিনি এর আগে চিঠি দিয়ে বলেছেন যে, আজকের গেট টুগেদারে যেন আমরা আইনজীবীরা উপস্থিত থাকি। ইতিহাস বলে, কখনও কোনো প্রধান বিচারপতি দাওয়াত করে এভাবে ছুটি নিয়ে চলে যান নাই। আমাদের সেটা জানার দরকার আছে’।
 
তিনি বলেন, ‘আপনাদের জানা আছে, আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম এভাবে দাওয়াত করে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি হাঁটতে পারছিলেন না, স্ট্রেচারে করে এসে আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আর এই প্রধান বিচারপতি, এমন কি ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে তিনি সেখানে উপস্থিত থাকতে না পেরে তিনি ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছেন? ’
 
এরপর দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এই উপমহাদেশে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যখন অটাম ভ্যাকেশন হতো, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের যে ছুটি সে ছুটির পরে আইনজীবীদের সঙ্গে বিশেষ করে অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বিচারপতিরা মিলিত হতেন। অনেকদিন বন্ধের পর নতুন করে কোর্ট শুরু হলো। প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিরা অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে মিলিত হবেন- আগে থেকেই নোটিশ দেওয়া ছিল’।
 
‘সে নোটিশের প্রেক্ষিতেই আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে আমাদের এ মিলনমেলা চলে বেলা ১টা পর্যন্ত’।
 
তিনি বলেন,‘সৌজন্য সাক্ষাতের আগেই আদালত বসেছিলেন। পাঁচজন বিচারপতি বসেছিলেন। কার্যতালিকার প্রায় ২০টির মতো মামলার আমরা নিষ্পত্তি করেছি’।
 
মাহবুবে আলম বলেন,‘আজ দুপুর সোয়া দুইটায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করেছেন। ফুলকোর্টের বিধান হলো- আদালতের কার্যক্রম, আদালতের কার্যতালিকা প্রণয়ন ও অন্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতে উভয় বিভাগের সমস্ত বিচারপতি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সভায় মিলিত হন। যেহেতু ফুলকোর্টের সভায় বিচারপতিরা মিলিত হবেন, কাজেই হাইকোর্টে কার্যত কোনো কাজ হবে না, মামলার শুনানি হবে না’।
 
‘বুধবার (০৪ অক্টোবর) থেকে সবগুলো কোর্ট নতুন কার্যতালিকা অনুসারে কাজ শুরু করবেন। এছাড়া আপিল বিভাগে কয়টি বেঞ্চ বসবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি’।
 
চাপ প্রয়োগ করে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে আইনজীবী সমিতির এ বক্তব্যের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনজীবী সমিতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কুক্ষিগত হয়ে পড়ায় এ ধরনের কথা বলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। একজন বা দু’জন বিচারপতির জন্য এদেশে কোনোদিনই বিচার বিভাগের কাজ বন্ধ থাকেনি’।
 
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আইনজীবী সমিতিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনারা জানেন, এর আগে কাদের মোল্লার পরিবারকে নিয়ে সমিতিতে মিটিং করেছে। অনেকগুলো যুদ্ধাপরাধের মামলার বিষয়েও বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। এ সমস্ত প্রচেষ্টা হীন প্রচেষ্টা’।
 
প্রধান বিচারপতির ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন, আইনমন্ত্রীও বলেছেন, তিনি কি কারণ দর্শিয়ে গেছেন। আমরা জানি, তিনি ক্যান্সারের রোগী। আগেও তার ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়েছে। কাজেই এটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিষয়। এ সমস্ত বক্তব্য দিয়ে একটি বিশেষ রাজনেতিক দল নানা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এগুলোর কোনো সারবেত্তা নেই, কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এগুলোকে গোচরে আনারই প্রয়োজন পড়ে না’।
 
প্রধান বিচারপতির বর্তমান অবস্থান নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি জানি না। আমার জানার কথা না। তাছাড়া অসুস্থ হলে যদি অনুমতি না দেন তাহলে তো জোর করে দেখতে যাওয়া যায় না’।
 
এর আগে বিএনপিপন্থী কিছু আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে আদালতে দেখতে চাওয়ার দাবিতে আইনজীবী সমিতি ভবনে মিছিল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।