মামলার প্রধান আসামি খানজাহান আলী গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (০৮ অক্টোবর) রুল জারিসহ এ স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি মো. মিফতাহউদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রুলে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।
শেখ কে এম মনিরুজ্জামান কবির বাংলানিউজকে বলেন, আসামিপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তরল কোকেন সন্দেহে ২০১৫ সালের ০৬ জুন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার সিলগালা করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ০৮ জুন এটি খুলে ১০৭টি ড্রামের প্রতিটিতে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। তেলের নমূনার প্রাথমিক পরীক্ষায় কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে উন্নত ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
ওই বছরের ২৭ জুন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর জানায়, কেমিক্যাল পরীক্ষায় তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দু’টি ড্রামের (৯৬ ও ৫৯ নম্বর) নমূনায় এ কোকেন শনাক্ত হয়।
পরে ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গনি বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ১(খ) ও ৩৩ (১)/২৫ ধারায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে চোরাচালান সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (বি) ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।
একই বছরের ১৯ নভেম্বর কোকেন আমদানির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত দু’জনসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়।
তবে এজাহারে নাম থাকলেও কোকেনের চালানটি যে প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দরে আনা হয়েছিল, সেই খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পান তার ভাই মোস্তাক আহমেদও।
অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয় তারা হলেন- গোলাম মোস্তফা সোহেল, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল, লন্ডনে অবস্থানরত বকুল মিয়া ও ফজলুর রহমান, কসকো শিপিং লাইনের ম্যানেজার এ কে এম আমজাদ, গার্মেন্টস পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদি আলম এবং সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
০৭ ডিসেম্বর অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামির নাম না থাকায় অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেননি আদালত। ওইদিন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রহমত আলীর আদালত মামলাটির অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে মাদকদ্রব্য আইনের ধারায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কমকর্তাকে দিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দেন। অন্যদিকে চোরাচালানের ধারায় তদন্তের দায়িত্ব পান নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান।
অধিকতর তদন্ত শেষে নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই মোস্তাক আহমেদ এবং আগের আটজনসহ ১০ জনকে আসামি করে গত ০৩ এপ্রিল আদালতে মাদকদ্রব্য আইনের ধারায় সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী। আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন নূর মোহাম্মদ, ছয়জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে এবং লন্ডনে থাকা দু’জন ও মোস্তাকসহ বাকি তিনজন পলাতক আছেন।
তবে চোরাচালানের ধারায় গত ১৪ এপ্রিল দেওয়া অভিযোগপত্রে নূর মোহাম্মদ ও তার ভাই মোস্তাক আহমেদকে আসামি করেনি নগর গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি আটজনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে গত ৯ আগস্ট নারাজি আবেদন দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফখরুদ্দিন চৌধুরী। গত ০৭ সেপ্টেম্বর ওই নারাজি আবেদন গ্রহণ করেছেন বিচারিক আদালত।
আদালতের ওইদিনের নির্দেশে এখন চোরাচালানের ধারাটিরও অধিকতর তদন্ত চালাচ্ছে র্যাব।
ৠাব-৭ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে। হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গত ১১ জুলাই কারামুক্ত হন ধনাঢ্য এই ব্যবসায়ী। এরপর ২৭ জুলাই রফতানিকারকসহ সাত প্রতিষ্ঠান এবং তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর