ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘প্রধান বিচারপতির ফিরে আসা সুদূরপরাহত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
‘প্রধান বিচারপতির ফিরে আসা সুদূরপরাহত’ সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আবার ফিরে আসা সুদূরপরাহত বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া লিখিত বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতির সম্পর্কে যে সমস্ত অভিযোগ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতির কাছে শুনেছেন, তাতে তারা তার সঙ্গে বসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন, অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়েছেন তিনি ছুটি নিতে’।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংকালে এসব বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এর আগে দুপুরে এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন বিচারপতি সিনহা। রাত ০৯টা ৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বিবৃতি দিয়ে যান।
 
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।

‘কি ধরনের অভিযোগ?’- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগগুলোতো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে, রাষ্ট্রপতি এটির সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। যেহেতু প্রধান বিচারপতির পদ ও বিষয় নিয়ে এ সমস্ত প্রশ্ন, সেজন্যই সবাই এ বিষয়টিকে খুব সংযতভাবে এ পর্যন্ত মিডিয়ার কাছে বলেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতেও সংযতভাবে বলা আছে’।

সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি পদে থাকতে পারেন কি-না বা থাকা উচিত কি-না বা ফিরে এসে কার্যভার গ্রহণের সুযোগ আছে কি-না?

জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখন যদি অন্যান্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে না বসতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। সে অচলাবস্থায় তো আর দেশ চলতে পারে না। কাজেই বাস্তবভাবে যদি অন্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে অনীহা প্রকাশ করেন, না বসেন, তাহলে তো বিচারকাজ হবে না। সুতরাং, এ পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব অবস্থা বিচার করলে তার আবার ফিরে আসা- এটি সুদূরপরাহত বলে আমার মনে হয়’।
 
‘তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন কি-না?’- জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘শপথ ভঙ্গটি হলো, যখন একটি অভিযোগ ওঠে, অভিযোগটি প্রমাণিত হয়, তখনই তো শপথ ভঙ্গ হয়ে যায়’।

‘অভিযোগ কি প্রমাণিত?’- প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো একদমই যদি কোনো রকম সত্য না হতো, দেশের একজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এ সমস্ত কথা বলা কি সম্ভব হতো?’

‘অভিযোগ ওঠার পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজন আছে কি-না?– সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কনসেপ্ট মেনে নেইনি। রাষ্ট্র, সরকার বা আমাদের কার্যালয় মেনে নেইনি। এজন্যই তো ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি’।

তবে ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ায় সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে’ বলে নিজের বিবৃতিতে অভিযোগ করে গেছেন প্রধান বিচারপতি।

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায় বা সরকার- এসব প্রশ্নের চেয়ে সবচেয়ে বড়ো বিষয় হলো যে, দেশবাসীর জানা উচিত- সরকার তাকে বসার বিষয়ে বিরত করেননি। বরং, তার সম্পর্কে কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়ে তার সহকর্মী বিচারপতিরাই তার সঙ্গে বসতে চাননি। এটিই হলো বাস্তব অবস্থা এবং এজন্যই তাকে ছুটি নিতে হয়েছে’।
 
‘এখন তো সমস্ত বিষয়টি অন্য বিচারপতিরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তারা যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে না বসতে চান, তিনি কি একা বসে বিচারকাজ পরিচালনা করবেন?’

‘এখন বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা কি প্রধান বিচারপতির চেম্বারে গিয়ে বসতে পারবেন কি-না বা তার বাসভবনে থাকতে পারবেন কি-না?’- প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এগুলো হলো ভারপ্রাপ্ত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়। এখানে কে রুম ব্যবহার করলেন, না করলেন, সেটি তো বিষয় নয়’।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
ইএস/এএসআর
**
‘সব দায়িত্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।