ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ঘটনাটি সমাজ-পারিবারিক বন্ধনে আঘাত: আদালত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
ঘটনাটি সমাজ-পারিবারিক বন্ধনে আঘাত: আদালত আদালতে আনা হয় দীপা ভৌমিককে, ইনসেটে রথীশ চন্দ্র

রংপুর: রংপুরে চাঞ্চল্যকর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ‘বাবুসোনা’ নিজ স্ত্রীর হাতে হত্যার ঘটনাকে সমাজ ও পারিবারিক বন্ধনকে আঘাত বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারী) স্ত্রী দীপা ভৌমিককে মৃত্যদণ্ডের রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ মন্তব্য করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ড অন্য দশটি হত্যাকাণ্ড থেকে একেবারে ভিন্ন।

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক আমাদের সমাজে আস্থা-বিশ্বাস ও ভালোবাসার সম্পর্ক। যা আমাদের পারস্পরিক বন্ধন আরও দৃঢ় করে। স্ত্রী হয়েও আস্থা-বিশ্বাস ভেঙে স্বামীকে হত্যা করা মানবতা ও নৈতিকতাবিরোধী কাজ।  

তিনি বলেন, এ ঘটনা আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনকে আঘাত করেছে, যা সমাজের জন্য হুমকি।  

নৃশংস এ ঘটনার মাত্র ১০ মাসের মাথায় মঙ্গলবার দুপুর ১টায় রথীশ চন্দ্র হত্যায় স্ত্রী দীপার মৃত্যুদণ্ড রায় ঘোষণা করা হয়।  

মামলার অপর দুই আসামি দীপার পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম রংপুর কারগারে গত বছরের ১০ নভেম্বর রহস্যজনকভাবে মারা যান এবং রথিশের সহকারী মিলন মোহন্ত গত বছর ১৪ এপ্রিল মারা যান হাসপাতালে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে কঠোর নিরাপত্তায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয় দীপা সরকারকে। আদালতে আনার সময় এবং রায় ঘোষণার পরও দীপাকে স্বাভাবিক অবস্থায়ই দেখা যায়।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে রংপুর মহানগরীর তাজহাট বাবুপাড়ায় অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক, তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মিলন মোহন্ত। এরপর রথীশের বিছানায় দীপা ও কামরুল রাত কাটায়। তারা পরের দিন ৩০ মার্চ সকাল ১১টার মধ্যে দিনের আলোতে বাড়ির আলমারিতে মরদেহ ভর্তি করে বাইরে বের করে গুমের উদ্দেশে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। এ ঘটনায় রথীশের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক একটি হত্যা মামলা করেন।

এদিকে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জঙ্গি, দেবোত্তর সম্পত্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাবুসোনা নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা চালায় দীপা ভৌমিক ও প্রেমিক কামরুল ইসলাম। পাঁচ দিন পর ৩ এপ্রিল দীপা ভৌমিককে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বাবুসোনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এক পর্যায়ে তার দেখিয়ে দেওয়া নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ার পরিত্যক্ত বাড়ির দরজা জানালাবিহীন রুমের মাটির নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় রথীশ চন্দ্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২৬ মার্চ কামরুল ও দীপা নিজ স্কুলের দুই শিক্ষার্থী রোকন ও সবুজকে দিয়ে কামরুলের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়ির দরজা জানালাবিহীন ঘরের মেঝে খুঁড়ে গর্ত করে রেখেছিলেন।

এ ঘটনায় বাবুসোনার ছোটভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম।

এই মামলায় ২১ অক্টোবর চার্জ গঠন করেন আদালত। পরবর্তীতে ৩৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক ২৯ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনার ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন। একমাত্র মেয়ে রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।