ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ডিআইজি মিজানকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না: আপিল বিভাগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
ডিআইজি মিজানকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না: আপিল বিভাগ

ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সময় দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা গণমাধ্যমে স্বীকার করে নেওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

রোববার (১৬ জুন) দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে এমন প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আদালতে দুদকের আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘হলমার্কের চেয়ারপারসন জেসমিন ইসলামকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল করেছিলাম। আমরা মানে দুর্নীতি দমন কমিশন। আজকে শুনানির সময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিলেন। জামিন বাতিল করে তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে সারেন্ডার করার জন্য নির্দেশ দিলেন। ’
 
তিনি বলেন, ‘এ মামলার শুনানির সময় আদালত আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। আদালত বললেন- আপনাদের (দুদক) একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এটা তো এলার্মিং দেশের জন্য। আমি বলেছি, এর বিরুদ্ধে পিউনেটিভ অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। ’
 
‘কিসের পিউনেটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? আপনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য অ্যাকশন নিয়েছেন, ঘুষের কোনো অ্যালিগেশন আপনি নেননি, অ্যাকশন নেননি। কোনো কিছু করেননি। ’
 
‘আমি বলেছি, ঘুষের জন্য নিতে হলে আমাকে একটু অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান করে আমাকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। আইনের বাইরে তো আমি কোনো কিছু করতে পারবো না। ’
 
‘আদালত বলেন, ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে বড়? তাকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। হ্যাঁ তাকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না? এই মামলায় তাকে কেন আপনি (দুদক) অ্যারেস্ট করছেন না?’
 
‘আমি বলেছি- আমার যে লোক (দুদকের কর্মকর্তা) আমি তাকে সাসপেন্ড করেছি। আর যে মামলায় তার (ডিআইজি মিজানুর রহমান) অ্যারেস্ট হওয়ার কথা সে মামলাতে অলরেডি চার্জশিট মেমো অব অ্যাভিডেন্স দেওয়া হয়েছে। এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দুদক একটা অ্যাকশন নিয়েছে। এই তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। নতুন একজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে নতুন করে কাজ শুরু করেছে’।

‘বিষয়টি অত্যন্ত আইনানুগভাবে গুরুত্ব সহকারে দুদক দেখছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। ’
 
গত ১০ জুন বাংলানিউজে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, কমিশনের তথ্য পাচার ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে সংস্থাটি।

দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
 
সূত্রে জানা যায়, পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে দায়মুক্তি দিতে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার জন্য ‘চুক্তি’ করেন খন্দকার এনামুল বাছির। সঙ্গে দাবি করেন একটি গ্যাসচালিত গাড়ি। ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ২৫ লাখ টাকা গত ১৫ জানুয়ারি রমনা পার্কে বাজারের ব্যাগে করে নগদে নিয়েছেন এই দুদক পরিচালক। তিনি দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ অনুবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
 
এদিকে, খন্দকার এনামুল বাছির তদন্ত থেকে দায়মুক্তি দিতে ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে দুদক। কমিশনের সচিব দিলওয়ার বখ্তকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় ৯ জুন। কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এই কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।
 
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- লিগ্যাল অনুবিভাগের মহাপরিচালক মফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান।
 
কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কমিশন।
 
খন্দকার এনামুল বাছির ১৯৯১ সালে অ্যান্টিকরাপশন অফিসার (এসিও) হিসেবে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে যোগ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হওয়ার পর তিনি সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক ও পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান।
 
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ পায় দুদক। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কমিশনের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে বাদ দিয়ে পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় কমিশন।
 
অপরদিকে, গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান রেখে অপর এক নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এছাড়া এক নারী সংবাদ পাঠিকাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ ওঠার পর তাকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।