ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ

ঢাকা: রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও কারাগারে থাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার  আজমত আলীকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

যাবজ্জীবন দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আজমত আলীর করা রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) এ সংক্রান্ত আদেশের অনুলিপি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।

আদেশে আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও তাকে আবার জেলে পাঠানো অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক। আদালত তাকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও ৯ বছর কারাগারে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক আজমত আলী। উচ্চ আদালতের রায়েও তিনি খালাস পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার ১৩ বছর পর আবার সে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সেই থেকে ৯ বছর ধরে কারাগারে আছেন এ বৃদ্ধ।

সাজা মওকুফ হওয়া আসামি একই মামলায় আবার কেন গ্রেফতার হলেন, এ দায় কার? এমন প্রশ্নের জবাবে জামালপুর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নির্মল কান্তি ভদ্র বলেন, এর জন্য দায়ী আসামিপক্ষ। তাদের অবহেলার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। মুক্তির বিষয়টি আগেই তাদের অবহিত করার দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে আজমত আলী। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। এই ঘটনায় আজমত আলীকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী। একই সময় তিনি রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার জন্যও আবেদন করেন। আপিল বহাল থাকার সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। আবার ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তিনি খালাস পান।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিকে (আজমত আলী) নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমতকে গ্রেফতার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে আসা রায়ে হাইকোর্টের রায় (খালাস) ও আদেশ রদ করে নিম্ন আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) ও আদেশ বহাল রাখা হয়।

আজমতের আইনজীবী জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আজমত আলী মুক্তির পর ওই লিভ টু আপিলের বিষয়ে আর খোঁজখবর রাখেননি। ফলে বাদীপক্ষ রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি জানায়নি। অন্য কেউই আর রাষ্ট্রপতির আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করেনি।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সমন্বয়ক রিপন পৌল স্কু বলেন, আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন তার বাবার বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। পর্যালোচনা সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে আপিল বিভাগে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’

এরপর লিগ্যাল এইড তার পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। ২৭ জুন আপিল বিভাগ রিভিউ নিষ্পত্তি করে রায় দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
ইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।