ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই: হাইকোর্ট

ঢাকা: ‘তারা (ওয়াসা) যদি সমস্যা সমাধান করতে পারে তাহলে ভালো। আমাদের দরকার পানি। বিশুদ্ধ পানি। আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই।’

ওয়াসার পানির দূষণ নিয়ে শুনানিতে বুধবার (২৪ জুলাই) এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
 
আদালতে ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাসুম।

রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
 
পানি পরীক্ষায় আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের ৩৪টি নমুনার মধ্যে আটটি পানির নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।  

আদালত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে ২৪ জুলাই পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রাখেন।
 
সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার রিট মামলাটি কার্যতালিকায় উঠে এসেছে। শুনানিতে এ এম মাছুম বলেন, সমন্বিত পানি পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ফেকাল কলির্ফম পাওয়া গিয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ ছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। সে সুপারিশ অনুসারে আইসিসিডিআর,বি ও বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাল) আমাদের পানি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পাতলা খান লেনের পানির রিপোর্ট পেয়েছি। মিরপুরেরটা রোববার পাবো।
 
তখন তানভীর আহমেদ বলেন, আদালতের আদেশের পরে পানি পরীক্ষার জন্য কমিটি গঠন করতে তিন মাস সময় লেগেছিল। আজকে প্রতিবেদনের ওপর জবাব দাখিলের কথা।
 
এ এম মাছুম বলেন, একটা প্রতিবেদন হাতে এসেছে। মিরপুরেরটা রোববার আসবে। আসলে প্রতিবেদন দিয়ে দিবো।
 
এ সময় আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, তারা (ওয়াসা) যদি সমস্যা সমাধান করতে পারে তাহলে ভালো। আমাদের দরকার পানি। বিশুদ্ধ পানি। আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভালো।
 
এরপর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ৩০ জুলাই দিন রেখেছেন। পরে এ এম মাছুম বলেন, সমন্বিত প্রতিবেদন আসার পর সেখানে জোন-১ ও জোন-৪। একটি মিরপুর অপরটি পাতলা খান লেনে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন। সেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হলে ফেকেল ও ই-কোলাই। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে আমরা ওয়ান বাই ওয়ান কারেক্টিফিকেশনে গিয়েছি। পাতলা খান লেনের ব্যাকটেরিয়া ঠিক করে আইসিসিডিআর,বি ও বুয়েটের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। মিরপুরেরটা রোববার পাওয়া যাবে।
 
সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিটি ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের বিভিন্ন এলাকা থেকে দৈবচয়ন ও দূষণের অভিযোগ রয়েছে এমন ৩৪টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৮টি নমুনাতে ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে।
 
১৬ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পানি পরীক্ষা বিষয়ক একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।  

প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার লিংকে (হটলাইন) গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে ১০টি জোনের ৫৯ এলাকায় ময়লা পানির প্রবণতা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ১৪মে পানি পরীক্ষা কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বি-এর ল্যাবে পানির বিভিন্ন প্যারামিটারের মূল্যহার একীভূত করে মোট বাজেট সংযুক্ত করা হলো।

বাজেটে বলা হয়, এই ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৬৫টি। এই ১০৬৫টি নমুনা করে তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে মোট ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।

এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে মতামত শুনতে ওই কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আদালতে আসতে বলেন।

এ আদেশ অনুসারে অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান ২১ মে হাইকোর্টে আসেন। ওই  আদালতে অধ্যাপক সাবিতা বলেন, যেসব পানিতে ময়লা দেখা যাচ্ছে বা ঘোলা সেটাতো পরীক্ষার দরকার নেই। সেটা রিজেক্টেড। যেটা সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন পরিষ্কার পানি পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি যা পান করে কোন এলাকার রোগ ছড়াবার তথ্য মেলে। ওয়াসা যে রিপোর্ট দিয়েছে ৫৯ এলাকা নিয়ে সেটাতো কয়েকমাস আগে। ওয়াসার পানির উৎস হলো ভূমিস্থ, ভূগর্ভস্থ, শীতলক্ষ্যা বা বুড়িগঙ্গা। এসব উৎসের পানি ‘সিজন টু সিজনে’ তারতম্য থাকতে পারে।

পানি পরীক্ষার খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি স্যাম্পলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। সেক্ষেত্রে ৩৪ স্যাম্পলে মোট এক লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে। এরপর আদালত আদেশে হাইকোর্ট ৩৪ পয়েন্টে  নমুনা সংগ্রহে পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই আদেশ অনুসারে, ২৭ জুন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে তা হস্তান্তর করেন।
 
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতবছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম-উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দেন।

গত ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিতা রিজওয়ানা রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪,২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।