ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ওসি মোয়াজ্জেমের মামলা ৪০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৯
ওসি মোয়াজ্জেমের মামলা ৪০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

ঢাকা: ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে জামিন দেননি হাইকোর্ট।

তবে ৪০ কার্যদিবসরে মধ্যে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে তার জামিন বিবেচনা করতে বলেছেন আদালত।

রোববার (৩ নভেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন।

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ ও আইনজীবী রানা কাওসার। মূল মামলার বাদী পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

আদেশের পরে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম সে সময় যদি ঠিকমত ব্যবস্থা নিতেন তাহলে হয়তো এ ঘটনাটি ঘটতো না, যে ১৬ জনের ফাঁসি হয়েছে তারা হয়তো তখন এ অপরাধটা করতো না।

তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলায় কারো কারো ফাঁসি হয়েছে থানা ম্যানেজ করার কারণে। তারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন থানা ম্যানেজ করার কারণে। থানা ম্যানেজ করার কারণে যদি ফাঁসির আদেশ হয়, তাহলে যিনি ম্যানেজ হয়েছেন তার তো কিছু হইলো না। আজ এ বক্তব্য আদালতে তুলে ধরার পর আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে আদেশ দিয়েছেন।

৪০ কার‌্যদিবসের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি প্রসিকিউশনের কারণে এই সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি না হয়, তবে ওসি মোয়াজ্জেম যদি জামিন আবেদন করেন তাহলে তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য ৩ নভেম্বর দিন রেখেছিলেন আদালত।  

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় ও তার জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে. মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

পরে, ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ১৭ জুন তাকে ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে করা হয়। ওইদিনই সোনগাজী থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম মোয়াজ্জেমকে আদালতে হাজির করে।  

পরে, জামিন আবেদন করলে তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর গত ১৭ জুলাই সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

এর আগে, হাইকোর্টে করা জামিন আবেদন ৯ জুলাই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। পরে, ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। ‘নিয়ম না মেনে’ জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দু’জন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।

গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগ মুহূর্তে বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

ওইদিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।