ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

হালদায় আর একটিও ডলফিন হত্যা নয়: ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২০
হালদায় আর একটিও ডলফিন হত্যা নয়: ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট

ঢাকা: চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার হালদা নদী থেকে আর একটিও ডলফিন কেউ যেন শিকার বা হত্যা করতে না পারে সে বিষয়ে বিনা ব্যর্থতায় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার (১২ মে) বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ভার্চ্যুয়াল কোর্ট এমন আদেশ দেন।
 
এ বিষয়ে বিবাদীরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা আদেশ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইমেইলযোগে উচ্চ আদালতকে জানাতে হবে।


 
ভিডিও কনফারেন্সে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতের সঙ্গে কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও অমিত তালুকদার।
বাদীপক্ষে রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন নিজেই যুক্ত ছিলেন।  
 
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে গত ২৬ এপ্রিল ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এজন্য সুপ্রিমকোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন ও ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওইদিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি।  
 
এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

দু’দিন পর ৯ মে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।

পরে ১০ মে সুপ্রিমকোর্টে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে চেম্বার আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে তিনটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

আর ১১ মে সোমবার হালদা নদীতে ডলফিন হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে ভার্চুয়াল কোর্টে ইমেইলযোগে প্রথম রিট আবেদন (ভি.সি রিট নং ১/২০২০) করেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন।  

মঙ্গলবার (১২ মে) এ আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আদালত আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, এই আবেদনটি আদালত তার স্বাভাবিক কার্যলক্রমে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে উপস্থাপন করার জন্য বাদীপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

‘আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রাউজানের উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া গেলো যে, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলাধীন হালদা নদী থেকে আর একটিও ডলফিন কেউ যেন শিকার বা হত্যা করতে না পারে সে ব্যাপারে উল্লেখিত বিবাদীরা বিনা ব্যর্থতায় আশু ব্যবস্থা নেবেন।

আদেশে আরও বলা হয়, হালদা নদীতে ডলফিন শিকার বা হত্যা না করার ব্যাপারে বিবাদীরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা আদেশ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের ইমেইলে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া গেলো। বিষয়টি আগামী ১৯ মে দৈনিক অনলাইন কার্যতালিকায় পুনরায় আদেশের জন্য থাকবে।  
 
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউন আর শাটডাউন পৃথিবীর নানা অংশের বন্যপ্রাণী ও নদী-সমুদ্রের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলেও মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না গাঙ্গেয় এ ডলফিন। অবৈধ জালের শিকার হচ্ছে মা মাছও। শনিবারও হালদা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইঞ্জিন বোটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে ১৩ কেজি ওজনের একটি মা মাছ। গাঙ্গেয় এ ডলফিন (গাঙ্গেটিকা প্লাটানিস্টা) দক্ষিণ এশিয়ার নদীগুলোতে একটি বিপন্ন প্রজাতি। প্রকৃতি সংরক্ষণের জোট ‘আইইউসিএন’ এ প্রজাতিকে মহাবিপন্ন হিসেবে লাল ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করেছে ২০১২ সালে।

ডলফিনের মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন ধরনের নৃশংসতাও। গত শুক্রবার সকালে রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নে হালদা সংলগ্ন এলাকায় একটি ডলফিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ডলফিনের চর্বি থেকে তৈরি তেল নারীদের রোগমুক্তি ঘটে— এমন কুসংস্কারের বশে এ ডলফিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। ’
 
হালদা নদীতে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিচালিত ইউএনডিপির সহযোগিতায় গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি ও বনবিভাগের পরিচালিত এক জরিপে হালদায় মাত্র ৪৫টি ডলফিনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। হালদা নদীর মোহনা থেকে সাত্তার ঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাকে ডলফিনের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল তখন।  

জরিপে বলা হয়েছে, জরুরি উদ্যোগ নিলে এ বিদ্যমান সংখ্যা থেকে ডলফিনকে দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষণ তো দূরের কথা, সেই ৪৫টি থেকে মৃত্যু হয়েছে ২৪টি ডলফিনের। লকডাউনের মধ্যে হালদা হারালো দু’টি ডলফিন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছে ২৪টি ডলফিন। যে গতিতে হালদায় ডলফিন মারা যাচ্ছে, সেটা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের মধ্যে হালদা ডলফিনমুক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
জরিপে ডলফিনের মৃত্যুর পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়। মাছ ধরার জাল, শিল্পকারখানার দূষণ ও যান্ত্রিক নৌযান। এসব বন্ধে বনবিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ টহলের ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছিল জরিপে। সেটা এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি। মার্চে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পূর্ববর্তী ঘোষণার মতো সেটাও যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়, সে বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তর সজাগ থাকবে কিনা, নিশ্চিত করে বলা যায় না।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২০
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।