ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ঈদের পর আদালত খুলবে, আশা সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
ঈদের পর আদালত খুলবে, আশা সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির ...

ঢাকা: প্রধান বিচারপতির সাথে আলেচনার প্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পর সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত খুলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিনউদ্দিন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন আশবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, “আদালত শারীরিকভাবে খোলার জন্য বারের দাবি ও মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সালে আলোচনর প্রেক্ষিতে আশাকরি ঈদের পর সুপ্রিম কোর্ট ও দেশের সকল আদালত খুলবে। ”

করোনাকালে ২৬ মার্চের পর দফায় দফায় সাধারণ ছুটিরও মেয়াদ বাড়ানো হয়। সবশেষ গত ১৬ মে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সরকার ৩০ মের পর সাধারণ ছুটি আর না বাড়ালেও আদালত অঙ্গনে নিয়মিত কার্যক্রমের পরিবর্তে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভার্চ্যুয়াল বিচার কাজ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এর মধ্যে গত ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি বরাবরে পাঠানো এক পত্রে বলা হয়, গত ১২ই মার্চ, থেকে অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত ছুটি এবং ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতসমূহে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতেও ইতোমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, কলকারখানা, মার্কেট ও গণপরিবহন চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে, একদিকে যেমন আইনজীবীগণ যথাযথভাবে তাদের পেশা পরিচালনা করতে পারছেন না ও আর্থিক সংকটে পতিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ওই পত্রে আরও বলা হয়, একথা অনস্বীকার্য যে, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণেই ভার্চ্যুয়াল আদালতের সৃষ্টি।

তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ আইনজীবী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ভার্চ্যুয়াল আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এছাড়া ভার্চ্যুয়াল আদালতে আগাম জামিনের মত অতীব গুরুত্বপুর্ণ আইনি ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ব্যাপক পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির করণীয় বিষয়ে কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভা বুধবার ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কার্যকরী কমিটির সদস্যরা বিদ্যমান পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে নিয়মিত আদালত চালুর ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়।

সিদ্ধান্তগুলো হলো— ভার্চ্যুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি অতিমত প্রকাশ করে।

যেহেতু করোনার ভয়াবহতার কারণে ইতোমধ্যে আদালতের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিতভাবে নষ্ট হয়ে গেছে সুতরাং এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডোর অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক ছুটি এবং সকল আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করতে হবে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে আদালতের ঐচ্ছিক ছুটিও কমিয়ে আনতে হবে।

নিয়মিত আদালত চালুর পুর্বে স্বাস্থ্য সুরাক্ষার ব্যবস্থা ও নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত নিয়মিত আদালত চালু করা সম্ভব হচ্ছে না ততদিন পর্য্ত সকল আইনজীবী যেন পেশা পরিচালনার সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভার্চ্যুয়াল কোর্টের সংখ্যা, পরিধি এবং বিচারিক সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য ভার্চ্যুয়াল আদালতেও আগাম জামিন চালু করতে হবে।

পরবর্তীতে গত ২৭ জুলাই ফের পত্র দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। ওই পত্রে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি গত ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ৭ টি প্রস্তাবনা আপনাকে (প্রধান বিচারপতি) অবগত করা হয়।

গত ২৬ জুলাই কার্যকরী কমিটির সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিগত সভার ৭টি প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে কার্যকরী কমিটি পুনরায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ জানানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

‘নিয়মিত আদালত চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সুনির্দিষ্ট অভিমত জানানো হলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অদ্যাবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কিনা, সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। নিয়মিত আদালত চালুর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে আমরা যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম, তা বিবেচনাযোগ্য কিনা, তা আমরা জানতে পারিনি। ’

‘অস্থায়ী ভিত্তিতে চালু থাকা ভার্চ্যুয়াল আদালতে সময়ের সীমাবদ্ধতা, মামলা দায়ের, লিস্টে আনা এবং আদেশ প্রেরণের ক্ষেত্রে আইনজীবীরা যেসব প্রক্রিয়াগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তার কোন দৃশ্যমান সমাধান আমরা পাইনি। ’

এমতবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির ৮ জুলাইয়ের প্রস্তাবনার আলোকে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর বিষয়ে পুনরায় আপনার সুচিন্তিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।