ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘পানি চাইলে মুখে থুথু দেওয়া হয় জনিকে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০
‘পানি চাইলে মুখে থুথু দেওয়া হয় জনিকে’ জনি।

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনিকে নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি খাওয়ার জন্য পানি চাইতে থাকেন। কিন্তু সেসময় পানির পরিবর্তে তাকে থুথু দেওয়া হয়।

আদালতের রায়ে এমন কথা উঠে এসেছে।  

আদালত বলেছেন, থানা হেফাজতে তাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তা ঘৃন্য এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এসআই জাহিদের এই নির্যাতনের সময় বাকি দুই পুলিশ সদস্য দেখলেও তারা ভুক্তভোগীকে সহায়তা না করে অপরাধে সহায়তা করেছে।  

তাই এই মামলার তিন আসামি পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টুকে এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  

এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই তিন আসামির প্রত্যেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আগামী ১৪ দিনের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করে আপিল করতে হবে বলেও আদালত রায়ে বলেছেন।  

এই মামলায় পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  

আরও পড়ুন>>জনি হত্যা: এসআই জাহিদসহ ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন

বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই রায় দেন।  

বেশ কয়েক বছর ধরেই ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন বাতিল’ চাওয়া হচ্ছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। এর মধ্যেই আইনটি পাস হওয়ার হওয়ার সাত বছর পর বুধবার এই আইনে প্রথম রায় হতে হলো।  

এই মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৪ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ রায়ের এই দিন ধার্য করেন।  

গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মামলার যক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঝপথে যুক্তিতর্ক বন্ধ হয়ে যায়। আগস্ট মাসে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ২৪ আগস্ট এই মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই সুমনকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে সে পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশ এসে জনিকে আটক করে নেয়। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশকে ধাওয়া দিলে তারা গুলি ছুঁড়ে।

আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় তাকে প্রথমে ন্যাশনাল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন।

জনির মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ হোসেন তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওসি জিয়াউর রহমানসহ পাঁচজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে প্রতিবেদনে নতুনভাবে অভিযুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। অভিযোগ গঠনের পর প্রায় সাড়ে চার বছরে এই মামলার বিচারকাজ শেষ হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
কেআই/এএটি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।