ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সগিরা মোর্শেদ হত্যা

শিশু আদালতে বিচার চেয়ে হাইকোর্টে মারুফ রেজা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০২০
শিশু আদালতে বিচার চেয়ে হাইকোর্টে মারুফ রেজা সগিরা মোর্শেদ

ঢাকা: রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনায় আসামি মারুফ রেজার বিচার শিশু আদালতে করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকাভুক্ত রয়েছে।

মামলাটি এখন অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি আসামি মারুফ রেজা তার বিচার শিশু আইনে করার জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। আসামিপক্ষের যুক্তি, ‘অপরাধ যখন সংঘটিত হয়েছে তখন আসামির বয়স ছিল ১৬ বছর ১০ মাস ২৬ দিন। সুতরাং ২০১৩ সালের শিশু আইনানুযায়ী তার বিচার হতে হবে শিশু আদালতে। মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই আসামির বিচার হতে পারে না। ’

গত ৭ অক্টোবর এ আবেদন খারিজ হওয়ার পর মারুফ রেজার পক্ষে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয় বলে জানান তার আইনজীবী দেওয়ান আব্দুন নাসের।

এর আগে সকালে সগিরা মোর্শেদ হত্যার ঘটনায় আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আগামী ২৬ নভেম্বর অভিযোগ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এ মামলায় কয়েক দফায় অভিযোগ গঠন শুনানি পেছায়। এরপর গত ৭ অক্টোবর আসামি মারুফ রেজা ঘটনার সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন বলে তার বিচার শিশু আইনে করার আবেদন করেন। এছাড়া মন্টু ঘোষ নামে একজন অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে এ আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন দুইটি নামঞ্জুর করে ৯ নভেম্বর অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, আসামিপক্ষ সোমবার দুটি দরখাস্ত দাখিল করে। তার মধ্যে একটি আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অসুস্থ থাকায় সময় চেয়ে আবেদন। অপর আসামি হলেন মারুফ রেজার অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে যে তার বিচার শিশু আইনে করার আবেদন নামঞ্জুর বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দাখিলে আরেকটি সময় আবেদন করে।

তিনি আরও বলেন, মারুফ রেজার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য আগামী ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। আদেশ দাখিল করতে না পারলে সেদিনই অভিযোগ গঠন শুনানি হবে।  

এ ঘটনার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চারজনের বিরুদ্ধে গত ১৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা। এছাড়া পূর্ববর্তী অভিযোগপত্রে মন্টু ঘোষের নাম ছিল।

গত ৯ মার্চ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন একই আদালত। সেদিনই অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৫ মার্চ দিন ঠিক করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় শুনানি পিছিয়ে যায়।  

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।

ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত ২ জনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাতকারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের। সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেফতার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হলে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২০
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।