ঢাকা: কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে র্যাবের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করা হয়েছে।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগ করেন তার আইনজীবী।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালের ৬ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় লালমাটিয়ার বাসা থেকে র্যাব-৩ এর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করেন। এরপর কতিপয় র্যাব সদস্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। ফলে তিনি দুই পায়ের অভ্যন্তরে এবং বাম পায়ে আঘাত পান। র্যাব সদস্য কর্তৃক উক্ত নির্যাতন ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন মোতাবেক সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ, যা বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালতের এখতিয়ারাধীন।
এই যুক্তি দেখিয়ে গত মে মাসের রমনা থানার জিআর মামলা ০২(০৫)২০২০ মামলার রিমান্ড শুনানিকালে আসামিকে সংশ্লষ্ট আদালতে উপস্থাপনের আদেশ চেয়ে এই দরখাস্ত দাখিল করেন কিশোরের আইনজীবী।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম আবেদনটি ওই থানার আমলী আদালতে শুনানির পরামর্শ দেন। এরপর আমলী আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর ছিদ্দিকের আদালতে আবেদনের শুনানি হয়।
শুনানিতে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কিশোরকে গত মে মাসে গ্রেফতারের পর র্যাব অমানবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের ফলে সে উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার নিয়মিত তারিখে চিরকুট দিয়ে তিনি এই তথ্য জানান। তাই আমরা নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করবো। এই মামলার আমলী আদালত মহানগর দায়রা জজ। আসামি উপরোক্ত মামলায় গ্রেফতার থাকায় তাকে উপযুক্ত আদালতে বাদীর জবানবন্দি প্রদানের জন্য উপস্থাপনের আদেশ দেওয়া হোক।
তখন আদালত বলেন, যেহেতু আমরা এই আদালতের অধীনস্থ, তাই এমন আদেশ প্রদানের এখতিয়ার আমাদের নেই। আপনারা বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালতে উক্ত দরখাস্ত দাখিল করলে উক্ত আদালতই এই মামলার নথি তলব পূর্বক তাকে আদালতে হাজিরের জন্য পিডব্লিউ ইস্যু করতে পারবেন।
এমন কথা বলে বিচারক উক্ত আবেদনটি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে ফিরিয়ে দেন।
এদিকে একই দিনে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম কিশোরের বিরুদ্ধে করা তিনদিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
গত ১৩ জানুয়ারি এই মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া ও লেখক মুশতাক আহমেদকে অভিযুক্ত করে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে রমনা থানা পুলিশ। যেখানে জুলকারনাইন খান ওরফে সামিসহ অন্য আটজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান, জার্মান প্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, নেত্র নিউজের সম্পাদক ও সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন শায়ের খান ওরফে সামি, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম ও ফিলিপ শুমাখার।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন মামলাটি অধিকতর তদন্তে সিটিটিসিকে নির্দেশ দেন।
২০২০ সালের ৫ মে র্যাব-৩, সিপিসি-১ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মিনহাজসহ ১১ জনের নামে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই মামলা করেন। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ‘আই এম বাংলাদেশি’ নামে ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছে। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। ওই পেজের অ্যাডমিন শায়ের জুলকারনাইন এবং আমি কিশোর, আশিক ইমরান, ফিলিপ সমাচার, স্বপন ওয়াহিদ, মোস্তাক আহম্মেদ নামীয় ফেসবুক আইডিসহ পাঁচজন এডিটর পরস্পর যোগসাজসে ফেসবুক পেজটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছে।
আহমেদ কবীর কিশোর, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের মধ্যে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিং’ এর প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তাদের ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল ফোনে ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। আলামত পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা ভাইরাস, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়।
এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
কেআই/এইচএডি