ঢাকা: দুই দশক ধরে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) অবসর নিয়েছেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল এই বিচারপতির কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।
সংবিধান অনুসারে ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায় রোববার ছিল তার কর্মজীবনের শেষ দিন। তিনি অবসরে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়জনে।
শেষ কর্ম দিবসে বিদায়ী বক্তব্যে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত দুই-একজনের পদস্খলনে পুরো বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। একবার যদি বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো সময় অপশক্তি আমাদের দেশ ও সমাজকে গ্রাস করে নিতে পারে।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, এই অনাকাঙ্ক্ষিত অপপ্রচার আজকাল প্রায়শ আমাদের কানে আসে। বিচার ব্যবস্থায় কারো একক অধিকার নাই। কারো একক প্রয়াসেও তা চলতে পারে না। সমষ্টিগত প্রয়াসে ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেরই একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থেকে কাজ করতে হবে। সুবিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদাধিকারীর ঐকবদ্ধ থাকা একান্ত প্রয়োজন।
‘একজন অভিভাবক যেমন সকলকে একত্রিত করে রক্ষা করেন। জ্যেষ্ঠ বিচারকগণও একইভাবে পরিবারের অভিভাবকের মত কনিষ্ঠ বিচারকদের ভালোবাসবেন, স্নেহ করবেন, দিক নির্দেশনা দেবেন এটাই কাম্য। তাদের আগলে রেখে পথ দেখাতে হবে, যাতে তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ’
বিচার বিভাগ নিয়ে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু, তা আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগের চৌহদ্দি সংবিধান লক্ষণ রেখার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সেখানে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থাকারও নির্দেশনা আছে। এখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ পরিধির মধ্যে থেকে কে কতটুকু কাজ করবে, তা সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ লক্ষণ রেখা অতিক্রম করতে না পারে।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আরও বলেন, আপনাদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আমরা যেন এমন কিছু না করি যাতে সুবিচারের প্রতি এই শ্বেতশুভ্র অট্টালিকার গায়ে এতটুকু কালিমা লাগে।
১৯৫৪ সালের ১ মার্চ জন্ম নেওয়া এ বিচারপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে জেলা আদালত, ১৯৮১ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ও ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
২০০১ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত ও ২০০৩ সালের ৩ জুলাই স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান মির্জা হোসেইন হায়দার। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ভুটান, চীন, ফ্রান্স, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উজবেকিস্তান সফর করেছেন।
আগের নিউজ: অবসরে যাচ্ছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২১
ইএস/এমজেএফ