ঢাকা: কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি বোমা পুতে রাখার ঘটনায় হওয়া ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য রায়সহ নথি) হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
এর আগে গত ২৩ মার্চ ওই রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
রায়ে আদালত বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধজনক মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে আসামিদের প্রকাশ্যে প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
তবে ফায়ারিং স্কোয়াডে দণ্ড কার্যকর করা না গেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশও দেন আদালত। আদালত বলেন, নির্দেশ মোতাবেক তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষের কোনো অসুবিধার কারণ থাকলে প্রচলিত নিয়মানুসারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
তাদের দণ্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারায় চরম দণ্ড প্রদান করায় দণ্ডবিধির ১২১ক/১২২/১২৪ক ধারা মতে কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি।
আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সকল নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় হাজতি ৯ আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। আর পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুরও আদেশ দেন আদালত।
আদালত রায়ে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ইচ্ছা করলে রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ এর ১৪ ধারা অনুসারে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক প্রদত্ত দণ্ড অনুমোদনের জন্য অবিলম্বে রায়সহ নথি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করা হোক।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছাহেব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মাহমুদ আজাহার ওরফে মামুনুর রশিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল খান, তারেক, ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, আনিসুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন মিয়া, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আসামিদের মধ্যে আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ, এনামুল হক ও মোছাহেব হাসান পলাতক।
হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেও অন্য মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজের মাঠে ২০০০ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই মাঠেই পরদিন শেখ হাসিনার সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বিস্ফোরক আইনে মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর সিআইডির সাবেক এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এ ঘটনায় হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১৭ সালের ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টও আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২১
ইএস/এমজেএফ