ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপকের সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডা সারা দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেই আলোচনা থামতে না থামতেই এক আইনজীবীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এক নারী আইনজীবীর সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডার এক মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই আইনজীবীর নাম নার্গিস পারভীন মুক্তি। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য তিনি। পুরান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো ওই আইনজীবীকে এক পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে চাপাচাপি করতে থাকেন। ওই আইনজীবী আইডি কার্ড দেখালেও তিনি তাকে মুখে পরিচয় দিতে বলেন।
তখন নারী আইনজীবী কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। সারা রাস্তা কষ্ট করতে করতে আসছি। আমার গলায় আইডি কার্ড দেখেও পুলিশ পরিচয় দিতে বলছে।
এ সময় আশপাশ থেকে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও কয়েকজন আইনজীবী পরিস্থিতি সামাল দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও অনেক আইনজীবী শেয়ার করেছেন। তারা আদালত এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণের বিচার চান।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক দফতর সম্পাদক এইচএম মাসুম লিখেছেন, অ্যাড. মুক্তির সঙ্গে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণের নিন্দা, প্রতিবাদ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানোর জন্য বার কাউন্সিল ও আইনজীবী সমিতির নিকট অনুরোধ জানাই।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হোসনী মোবারক লিখেছেন, যে সমস্ত বিজ্ঞ আইনজীবী ভাই ও বোনেরা গতকালের (রোববার) ডাক্তারের সাথে পুলিশের ঘটা ঘটনাকে নিয়ে ফেসবুক অদ্যাবধি গরম করে রাখছেন, তাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ, অ্যাডভোকেট মুক্তি আপাকে এই পুলিশ আমাদের সিএমএম কোর্টের সামনে যে অপদস্ত করার চেষ্টা করলো, তা নিয়ে প্রতিবাদমুখর হন। সেই ডাক্তার তো আইডিকার্ড দেখাননি, আপা তার কর্মস্থলের সামনেই ছিলেন, আইডিকার্ড গলায় ঝুলানো ছিল। এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই পুলিশি হয়রানির বিচার চাই।
আরেক আইনজীবী মো. মকিম মন্ডল লিখেছেন, কী চমৎকার আচরণ তাহার তাই না? ডাক্তার আইডি কার্ড দেখালে ঝামেলা হতো না বলা সুনাগরিকরা এবার দেখুন, আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাখার পর কী আচরণ এই মানবিক রাজার! সংবিধান সংশোধন করে তাদের রাজা-মহারাজা ঘোষণা করা হোক, না হলে বর্তমান যেভাবে লেখা আছে সেটার বাস্তবায়ন করা হোক! তারা প্রজাতন্ত্রের সেবক হয়রানিকারক নয়! তার এই আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হলো!
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী আইনজীবী নার্গিস পারভীন মুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি ভিডিওটি দেখিনি। কী ঘটনা ঘটেছে বা ওই সময় কোন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন তা আমি বলতে পারছি না।
এদিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতি এক বিবৃতিতে আইনজীবী মুক্তির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে। মঙ্গলবার সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. খন্দকার হজরত আলীর যৌথ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক কার্যকরী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট নার্গিস আক্তার মুক্তি, যার সদস্য নং-১০২৮০। গত ১৯/০৪/২০২০১ ইং তারিখে তিনি বিজ্ঞ সিএমএম আদালতে প্রবেশের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। ঢাকা আইনজীবী সমিতি উক্ত ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ উক্তরূপ বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখিন না হন, এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
কেআই/এমজেএফ