ঢাকা: সাংবাদিকতা কেন চুরির অপরাধ হবে, এমন প্রশ্ন রেখেছেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আনিসুল হক বলেন, সাংবাদিকের কাজই যেখানে সমালোচনা করার সেখানে সমালোচনা করা। সেই সমালোচনা যার বিপক্ষে যাবে তিনি সাংবাদিককে ভয় পাবেন, তিনি বেজার হবেন। সচিবালয়ে তিনি অনেক অনিয়ম জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। তাই সেখানে তাকে অনেকেই ভয় পান। তবে আমার প্রশ্ন হলো, তাই বলে সাংবাদিকতার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা কেন চুরির অপরাধ হবে?
তিনি বলেন, আজ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। তবে কথা হলো কেন এই মামলা হবে? আমি নির্বাহী আদেশে এই মামলা প্রত্যাহার করে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম। একইসঙ্গে জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মে) দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু শুনানি করেন। এ সময় অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন হিরন উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, অনেকেই তো সাংবাদিকতা করেন। কিন্তু সরকারি গোপনীয় দলিল চুরির মতো জঘন্য কাজ তো তারা করেন না। তিনি স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে করোনার টিকা আমদানি সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের সমঝোতা স্মারকসহ অনেক সম্পর্শকাতর দলিল চুরি করেছেন। তিনি সরকার বিরোধী কারও ইন্ধনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এমনটি করেছেন। তার সঙ্গে এই কাজে আর কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে তিনি এমনটি করেছেন তার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
অপরদিকে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আশরাফ-উল আলম, প্রশান্ত কর্মকার, মানবাধিকার সংগঠন আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে আব্দুর রশিদ, ব্লাস্টের পক্ষে মসিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন।
তারা বলেন, রোজিনা ইসলাম এক যুগের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করছেন দৈনিক প্রথম আলোতে। সচিবালয়ে তিনি পরিচিত মুখ। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে। আমরা তার রিমান্ড বাতিল চাইছি।
শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড আবেদন বাতিল করেন। একইসঙ্গে তার আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে জামিন শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করা হয়। এরপর রোজিনাকে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে রোজিনা ইসলামের জিজ্ঞাসবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি চুরির অভিযোগে হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার ভারপপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান সরদার রিমান্ডের এই আবেদন করেন।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সকাল ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে আদালতে নেওয়া হয়। সিএমএম আদালতের হাজতখানায় তাকে রাখা হয়। শুনানির জন্য বেলা ১১টার দিকে এজলাসে তোলা হয়। শুনানি শেষে বেলা ১২টার সময় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমবার রাতেই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার নম্বর ১৬।
দণ্ডবিধি ৩৯৭ এবং ৪১১ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এর ৩/ ৫ এর ধারায় এ মামলা করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। এই মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে রোজিনা ইসলামকে।
সোমবার (১৭ মে) রাতে শাহবাগ থানার এডিসি হারুনুর রশিদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে সচিবালয় থেকে পুলিশি পাহারায় শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আরও নিউজ:
** রিমান্ড নামঞ্জুর, সাংবাদিক রোজিনা কারাগারে
** সাংবাদিক রোজিনার ৫ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
** আদালতে নেওয়া হয়েছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে
** সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরার ভিডিও ভাইরাল
** সরকারি নথি সরানোর অভিযোগে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা
** রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে শাহবাগে সাংবাদিকদের অবস্থান
** সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটক করে থানায় দিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২১
কেআই/এমজেএফ