ঢাকা: কৃষি ব্যাংক থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী আব্বাসের ৮৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ‘অবৈধভাবে’ ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবর (২৪ মে) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।
গত ৫ মে দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘অবৈধভাবে বিএনপি নেতার ৪৮ কোটি টাকা সুদ মাফ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিছুর রহমান।
পরে আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, পত্রিকার খবর অনুসারে কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭ কোটি কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার এবং স্থগিত সুদ ৪১ লাখ ৪২ হাজারের অর্ধেক ২০ লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। আদালত ৭৪০তম সভার সিদ্ধান্তে নথি তলব করেছেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেছেন।
রুলে এ বিষয়ে অর্থঋণ ও অর্থপাচার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আব্বাস ট্রেডিংয়ের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী আব্বাসের বিরুদ্ধে কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে ব্যবসার জন্য কৃষি ব্যাংক থেকে ৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক বিএনপি নেতা। ঋণ পরিশোধ না করায় দুই বছর পর অর্থঋণ আদালতে মামলা হয়েছিল। ওই টাকায় নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনও মামলা করে। কিন্তু দু’টি মামলার কোনোটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই ঋণের প্রায় ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়েছে।
‘অবৈধভাবে এই সুদ মওকুফের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। বিএনপির এই নেতার নাম মোহাম্মদ আলী আব্বাস। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স আব্বাস ট্রেডিং। কৃষি ব্যাংক সূত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং মামলার এজাহার সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর এলাকার মোহাম্মদ আলী আব্বাস চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে দলের কোনো কমিটিতে নেই তিনি। একসময় পাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। আন্দরকিল্লায় তার মালিকানাধীন আব্বাস ট্রেডিংকে ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া হয় ২০১১ সালে। পণ্য এনে বিক্রির পর ঋণ পরিশোধের কথা থাকলেও ১০ বছরেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেননি আব্বাস।
নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে এই টাকা রূপান্তর করা ও অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলায় কারাগারে যান আব্বাস। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। মামলাটি এখন মহানগর বিশেষ আদালতে বিচারাধীন।
একই অভিযোগে ওই বছর কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আব্বাসের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ জুন বিএনপি নেতা আব্বাস ঋণের সুদ মওকুফের আবেদন করেন। কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বিআরপিডি সার্কুলার-৫-এর আওতায় সুদ মওকুফের জন্য ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় কার্যপত্র উপস্থাপন করে। সভায় অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭ কোটি কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার এবং স্থগিত সুদ ৪১ লাখ ৪২ হাজারের অর্ধেক ২০ লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। অবশিষ্ট পাওনা ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে মোট ৩৬টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অনিয়মের মাধ্যমে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের প্রমাণ পাওয়ায় একটি কমিটি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের প্রতিনিধি আছেন। কমিটি অনিয়ম চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করার কথা রয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা শোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে ঋণটি এরই মধ্যে পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। ’
আব্বাস ট্রেডিংয়ের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী আব্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঋণ পুনঃতফসিল হওয়ার পর এরই মধ্যে দুই কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছি। পুনঃতফসিলের শর্তানুযায়ী বাকি টাকাও শোধ করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২১
ইএস/এএ