ঢাকা: ২০০২ সালে সাতক্ষীরায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় ১০ বছরের দণ্ডিত বিএনপির সাবেক
সংসদ সদস্য (এমপি) হাবিবুল ইসলাম হাবিরের আপিল জজ কোর্টের পরিবর্তে হাইকোর্টে শুনানি চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দিন রেখেছেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াতের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম। হাবিবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সাতক্ষীরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবীর।
পরে হাবিবুল ইসলাম হাবিব জেলা জজ কোর্টে আপিল দায়ের করেন।
বুধবার (২৬ মে) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুল ইসলাম বলেন, জজ আদালত তাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। তাই ১০ বছরের দণ্ডিত হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আপিল শুনানির আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি হলো যাদের সাত বছরের বেশি দণ্ড হয়েছে তাদের আপিল শুনানি জজ কোর্টে নয়, হাইকোর্টে হতে পারে। এ কারণেই এ রিভিশন দায়ের করা হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফুর রহমান ও রিপনকে ১০ বছর করে, আব্দুল কাদের বাচ্চুকে নয় বছর, আব্দুর রাজ্জাককে ছয় বছর, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, আব্দুর রাকিব মোল্লা, আক্তারুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, হাসান আলী, ইয়াছিন আলী, ময়না, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রব, রিংকু ও আব্দুস সামাদকে চার বছর ছয় মাস করে এবং আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, আব্দুল খালেদ মঞ্জুর রোমেল, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, জহুরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, মো. আলাউদ্দিন, আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহীদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফ্ফার গাজী ও মাহাফুজুর রহমান সাবুকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০২ সালে কলারোয়ার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় যাচ্ছিলেন। কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহর পৌঁছালে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা গুলিবর্ষণ করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় বিরোধীদলীয় নেতা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার গাড়িবহরে থাকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, শেখ হাসিনার ক্যামেরাম্যান শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও এ ঘটনায় আহত হন।
কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। থানা মামলাটি রেকর্ড না করায় একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনি সাতক্ষীরার আমলি আদালতে মামলাটি করেন। এ মামলা খারিজ হয়ে যাবার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ সময় তদন্ত করে পুলিশ তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়।
মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে মামলা বাতিলের আবেদন করেন আসামিরা। এরপর গত বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য শেষ করার জন্য সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর মামলাটির বিচার কাজ নতুন করে শুরু হয়।
এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
আরও পড়ুন>>
** বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবসহ ৫০ জনের জেল
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২১
ইএস/আরআইএস