ঢাকা: ১৭৯৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রণীত এক হাজার ২৮৬টি আইনে কোনো বৈষম্যমূলক বিধান রয়েছে কিনা তা গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করে সুপারিশ দিয়েছে দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের উপস্থিতিতে রোববার (২০ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ/বিভাগ তাদের সুপারিশ দেয়।
সোনারগাঁও হোটেলে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ আয়োজিত লেজিসলেটিভ রিসার্চ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যে কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক আইনি কাঠামো অপরিহার্য। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অন্যান্য গোলের সাথে বৈষম্যহীন আইন ও নীতি প্রয়োগ বিষয়ক গোল বাস্তবায়নে বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের উদ্যোগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এসডিজির গোল-১৬(বি) বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এর অংশ হিসেবে ‘আইনি গবেষণার মাধ্যমে তারতম্যমূলক আইন ও নীতি চিহ্নিতকরণপূর্বক উহা সংস্কার বিষয়ক প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৭৯৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রণীত এক হাজার ২৮৬টি আইনে কোনো বৈষম্যমূলক বিধান রয়েছে কিনা তা গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিতকরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ/বিভাগকে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেছে। গবেষণার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন আইনের বৈষম্যমূলক বিধান, বৈষম্যের বিভিন্নরূপ, যেমন- লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে বৈষম্য, প্রয়োগের মাধ্যমে বৈষম্য ইত্যাদির স্বরূপ উৎঘাটনপূর্বক বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করেছে। আইন মন্ত্রণালয় এসব সুপারিশ বিশ্লেষণ করবে যাতে সংশ্লিষ্ট আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনয়ন করা যায়। এছাড়া সরকার বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে এসব সুপারিশ বিবেচনা করা হবে।
অন্যান্য সরকারের সময়ে বাংলাদেশে আইন প্রণয়নের বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশেষ কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকার কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনো কখনো দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি যে, কেউ কেউ আইন বিষয়ে গবেষণা এবং ভালোভাবে পড়াশুনা ছাড়াই আইন সম্বন্ধে কথা বলে থাকেন, আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। আইন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে বিষয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা ও গবেষণা না করে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। দিলে জনগণ বিভ্রান্ত হন।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া কর্মশালায় বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক আইনি গবেষণাকর্ম প্যাকেজ-১, ২, ৩ ও ৪ এর টিম লিডার যথাক্রমে প্রফেসর ড. এম. আহসান কবির (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), প্রফেসর কে.শামসুদ্দিন মাহমুদ (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়) ও প্রফেসর ড. মো. রহমত উল্লাহ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) নিজ দলের গবেষণাকর্মের ফলাফল উপস্থাপন করেন।
এ সময় আইন মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ