ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর কারাদণ্ড: আপিল বিভাগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২১
যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর কারাদণ্ড: আপিল বিভাগ

ঢাকা: যাবজ্জীবন সাজা অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ড, এমন রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

তবে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড উল্লেখ করলে তখন ওই আসামির আমৃত্যু কারাবাস হবে।

এই ব্যাখ্যা দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) আপিল বিভাগের ১২০ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি যাবজ্জীবন করাদণ্ড অর্থ ৩০ বছরের কারাদণ্ডের পক্ষে একমত হয়েছেন।

তবে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, যাবজ্জীবন সাজা অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড।  

রায়ে বলা হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলতে প্রাথমিকভাবে বাকি জীবন কারাবাস বা স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস। তবে দণ্ডবিধির ৪৫, ৫৩, ৫৫ ও ৫৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ক ধারা একসঙ্গে মিলিয়ে পড়লে এটা স্পষ্ট যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর কারাদণ্ড।

যদি কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস উল্লেখ করে তবে সেক্ষেত্রে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ৩৫ক ধারার রেয়াদের সুবিধা পাবেন না।

গত বছরের ১ ডিম্বেরর এই রায় দেওয়া হয়েছিল।

২০০১ সালে সাভারে জামান নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্টে আপিলের পর বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকে। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সর্বোচ্চ আদালত।

রায় ঘোষণার সময় আপিল বিভাগ ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ এমন মন্তব্য করেন বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ মামলার ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশিত হয়। পরে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আতাউর রহমান মৃধার আইনজীবী ওই রায়ের রিভিউয়ের কথা সাংবাদিকদের জানান। পরে রিভিউ করেন আতাউর রহমান মৃধা।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরিরা হলেন- ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এএফ হাসান আরিফ, আব্দুর রেজাক খান।

শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, যাবজ্জীবন সাজার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হবে। আমাদের আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে ৩০ বছর বলা আছে। যা রেয়াত পাওয়ার পর সাড়ে ২২ বছর হয়। উন্নত বিশ্বেও সাজার মেয়াদ বলে দেওয়া হয়। সেখানে প্যারোল ব্যবস্থাও রয়েছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। তাই যাবজ্জীবন হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হলে কারাগারগুলো বৃদ্ধাশ্রম হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২১
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।