রাজশাহী: বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার শর্তে দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে প্রবেশনে সাজা দিয়েছেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে কেকের বদলে পাউরুটি কাটায় তাদের নামে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) ওই মামলার রায়ে ১১ আসামির মধ্যে ৯ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আর অভিযোগে প্রমাণিত হওয়ায় দুই শিক্ষককে পাঁচটি শর্তে সাজা দিয়ে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে।
তিন মাস পর পর দুই শিক্ষকের প্রবেশনকালীন শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সমাজসেবার প্রবেশন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রবেশন হচ্ছে- অপরাধীকে প্রাপ্য শাস্তির জন্য কারাবদ্ধ না রেখে পরিবার ও সমাজের মধ্যে থেকেই সাজা ভোগের সুযোগ দেওয়া।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা অভিযুক্ত দুই আসামির প্রবেশনের শর্ত মানার বিষয়টি তদারকি করবেন।
শর্ত পালন সন্তোষজনক হলে তাদের ওই দণ্ড চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনোভাবে আর অযোগ্য বলে গণ্য হবেন না।
রায়ে মামলার দুই অভিযুক্ত আসামি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম (৫৫) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির (৪৮)।
শর্ত ভাঙলে তাদেরকে আবারও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এছাড়া তাদেরকে নগদ এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড। মঙ্গলবার রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইসমত আরা জানান, আদালতের বিচারক দুই আসামিকে পাঁচ শর্তে প্রবেশন দিয়েছেন।
প্রবেশনের শর্তগুলো- এই প্রবেশনকালীন সময়ে আসামিরা নতুন করে আর কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়াবেন না, একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে নিজেরা পড়বেন-জানবেন এবং সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাবেন, আদালত এবং পুলিশ তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন, প্রবেশনকালীন সময়ে জাতির পিতার নিজ হাতে লেখা তিনটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়বেন।
এছাড়া জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলো’ এবং রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরেরর চিঠি’ বইগুলো পড়বেন। আর অভিযুক্ত দুই আসামি প্রবেশনে থাকার সময় নিজ এলাকায় ১০টি করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপন করবেন।
এর আগে, গত বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসায় কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কাটা হয়। কেবল তাই নয়, ওই পাউরুটি কাটার অনুষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেন মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম কবির।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক এই আয়োজন দেখে স্থানীয়রা গোমস্তাপুর থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মাদরাসা সুপার আব্দুস সালাম ও শিক্ষক গোলাম কবিরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ওই দিন রাতেই তথ্য-প্রযুক্তি আইনে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
এসএস/এএটি