ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. মাজেদুর রহমান মাজেদের সাজা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
গত ১৭ মে দেওয়া ওই রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
আদালতে মাজেদুর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী চৌধুরী মোরশেদ কামাল টিপু। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ কে খান উজ্জল ও শাহ নাভিলা কাশফি।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি।
এ বিষয়ে সোমবার (৬ জুন) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি জানান, আসামি মাজেদুর রহমান যথা সময়ে আপিল করতে পারেনি। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১এ ধারায় সাজা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। গত ১৭ মে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।
আইনজীবী চৌধুরী মোরশেদ কামাল টিপু জানান, মাজেদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছেন। অথচ এ মামলায় মাজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষী নেই। কোনো পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যও নেই। এমনকি সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও মাজেদকে দেখা যায়নি। এ হত্যাকাণ্ডে মাজেদের সম্পৃক্ততা কোনোভাবে প্রমাণিত হয়নি। তারপরও বিচারক মাজেদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছেন। রায়ের ক্ষেত্রে বিচারক তার বিচারিক মন মানসিকতা প্রয়োগ করেননি। যা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, এটি দ্রুত বিচার আদালতের মামলা, সেহেতু ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ৩০ দিনের মধ্যে আমরা (মাজেদ) আপিল করতে পারিনি। তার কারণ হলো মাজেদের বাবা নেই। মাজেদই সংসারের বড় ছেলে। ঢাকা শহরে তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও নেই। এ কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৬৫১এ ধারায় গত এপ্রিল মাসে হাইকোর্টে আমরা আবেদন করি। শুনানি নিয়ে ১৭ মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার আদেশের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেয়েছি।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এছাড়া এ মামলার রায় অনুযায়ী আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।
পরে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। পাশাপাশি অনেকে ফৌজদারি আপিলও করেছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম অরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ অরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম (২০) (পলাতক), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২) (পলাতক), মুজতবা রাফিদ (২১) (পলাতক)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩) ও মো. মোয়াজ অরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা সবাই বুয়েটেরই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২২
ইএস/আরবি