ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘প্রেমে বাঁধা হওয়ায় শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
‘প্রেমে বাঁধা হওয়ায় শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত’

ঢাকা: প্রেমে বাঁধা হওয়ায় নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আসামি আশরাফুল ইসলাম জিতু।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এই মামলার রিমান্ড শুনানিকালে জিতু নিজেই আদালতে একথা বলেছেন।

এদিন তদন্ত কর্মকর্তার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, নিহত উৎপল কুমার সরকার চিত্রশাইল হাজী ইউনুস স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। উক্ত আসামি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র। বর্ণিত আসামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মসহ ছাত্রীদের ইভটিজিং করতো। উৎপল কুমার সরকার উক্ত প্রতিষ্ঠানে সচেতন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের নীতি নৈতিকতার বিষয়টি দেখাশুনা করতেন। সে কারণে তিনি ওই আসামিকে একাধিকবার সব অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেন।

উক্ত ঘটনার জের হিসেবে বিগত ২৫ জুন বেলা অনুমান দেড় টার সময় কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট চলাকালে ওই আসামিসহ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেআইনি জনতাবদ্ধভাবে কলেজ প্রাঙ্গণে এসে উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করে গুরুতর আহত করে।

স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ও কপালে আঘাত করে ‍গুরুতর জখম করে। এছাড়া ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পের সূচালো অংশ দিয়ে তার ডান ও বাম পাশের পেটে একাধিক পার মেরে গুরুতর জখম করে। ফলে পেটের নাড়ি-ভুঁড়িসহ বিভিন্ন গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন ভোর ৫টা ৮ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।

এমতাবস্থায় হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো আসামির সম্পৃক্ততা বা ইন্ধন আছে কি না, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও অপর অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেফতারের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।

ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসানের আদালতে রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এ সময় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তাই বিচারক আসামির কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। তখন আসমির জিতু আদালতকে বলেন, রিমা নামে এক মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। এই শিক্ষক আমার প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। বাসায় গিয়েও আমার নামে দুর্নাম করেন। অন্য আরেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেও তিনি আমার ব্যাপারে দুর্নাম করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমি তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করি।  

শুনানি শেষে বিচারক জিতুর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার (২৯ জুন) রাতে শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান আসামি জিতুকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। পরে বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাব আসামিকে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করে।

গত ২৫ জুন দুপুরে হাজী ইউনুস আলী কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলার সময় পেছন থেকে শিক্ষক উৎপলকে কাঠের স্ট্যাম্প দিয়ে হামলা করে জিতু দাদা নামের এক ছাত্র। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় রোববারই (২৫ জুন) নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় জিতুর নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বুধবার জিতুর বাবাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
কেআই/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।