কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় কাপড় ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মেহেরুল (৫০) এবং স্কুল শিক্ষক বান্দা ফাত্তাহ মোহনকে (৫৫) গুলি করে হত্যার দায়ে ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সাজার আদেশ দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১ এর বিচারক মো. তাজুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. তারিক প্রামাণিক (৪২), কামাল রেজা নিপু (৫২), আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলাম মাসুদ (৪২) ও নবীর আলীর ছেলে রায়হান আলী (৪৭)।
কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট রাত সোয়া ৯টায় ভেড়ামারা রেল বাজার মসজিদ সংলগ্ন মার্কেটে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কাপড় ব্যবসায়ী মো. মেহেরুল ইসলাম তার নিজ দোকানের আঙিনায় স্কুল শিক্ষক বান্দা ফাত্তাহ মোহনসহ আরও ৬/৭জন বসে গল্প করছিলেন। এসময় হঠাৎ তিনটি বাইকে করে ৮/৯ জনের একদল দুর্বৃত্ত সেখানে এসে উপর্যুপরি ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গোটা শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে এবং লোকজন ছুটাছুটি করতে থাকে। সংবাদ পেয়ে ভেড়ামারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা চলাকালে স্কুল শিক্ষক বান্দা ফাত্তাহকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ৬ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা মেহেরুলের (৫০) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তারও মৃত্যু হয়। নৃসংশ এ হত্যার ঘটনায় নিহত বা আহত কারো পরিবার বা আত্মীয় স্বজন থানায় মামলা করতে অনিচ্ছা পোষণ করায় ১৭ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে ভেড়ামারা থানার পুলিশ উপ পরিদর্শক শেখ আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন। মামলাটি ভেড়ামারা থানার পুলিশ পরিদর্শক আজম খান তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২১ জুলাই ১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যার দায়ে জড়িত অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী জানান, ভেড়ামারা থানার চাঞ্চল্যকর গুলিবর্ষণসহ হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। তবে অভিযুক্ত সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত চাঁদ আলীর ছেলে সিদ্দিকুল ওরফে বাংলাভাই ইতোপূর্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
মামলা পরিচালনাকারী আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুধীর কুমার শর্মা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
আরএ