ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকম থেকে পাওনা আদায়ের মামলায় শ্রমিকদের আইনজীবী ইউসুফ আলী ফি হিসেবে ১৬ কোটি টাকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে ইউসুফ আলীর আইনজীবী এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালতে শ্রমিকদের আইনজীবী ইউসুফ আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সাঈদ আহমেদ রাজা, রবিউল আলম বুদু, অনীক আর হক।
গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।
কোম্পানির মুনাফার অংশ ৫ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠনসহ লভ্যাংশ ২০০৬ সাল থেকে তা শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা। কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেন তারা। আর গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
গত ২৩ মে আদালতের বাইরে উভয়পক্ষের সমঝোতা হয়েছে উল্লেখ করে আবেদনকারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী জানান, সম্প্রতি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা দাবি নিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছে। মালিকপক্ষ গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, আইন অনুযায়ী যত পাওনা তা পরিশোধ করা হবে। এ কারণে আবেদনকারীরা বলেছেন যে, তারা মামলাটি আর চালাতে চান না, তাই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
পরে ৩০ জুন এ আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, মোট ৪৩৭ কোটি টাকা। গ্রামীণ টেলিকম একটি সেটেলম্যান্ট অ্যাকাউন্ট করেছিল, যেটির সিগনেটরি হলেন কোম্পানির এমডি ও ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ওই অ্যাকাউন্টে পুরো ৪৩৭ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পাওনাদার ব্যক্তিকে তাদের পাওনা হিসেব করে পরিশোধ করা হয়েছে।
আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, আদালত জানতে চেয়েছেন- ঠিক মতো লেনদেন হয়েছে কিনা, সব শ্রমিক ঠিক মতো টাকা-পয়সা পেয়েছে কিনা, এ বিষয়টি কোর্টকে এফিডেভিট আকারে দুই পক্ষকে যৌথভাবে জানাতে বলেছে। আমরা আগামী ২ আগস্ট জানাবো।
একইদিন এ বিষয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, একটি খবর বেরিয়েছে যে এ বাবদ ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। আসলে এটি একটি গুজব। এ প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা নেই।
পরে ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে নিয়ে আষাঢ়ে গল্প বানানো হয়েছে। গল্প বানানোরতো একটা যুক্তি থাকে। মানুষ কী মামলায় হারার জন্য ঘুষ দেয় নাকি। প্রফেসর ইউনূস তো আমার সঙ্গে মামলায় হেরেছেন। তিনি বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা দিয়েছেন। ১২ কোটি টাকার বিষয়টি সত্য নয়। আমার ফিস পরিশোধ করা হয়েছে অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে। শ্রমিক ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে আমার অ্যাকাউন্টে। এটা চাইলে বের করা যাবে।
অ্যাকউন্ট জব্দের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সকালে গিয়ে দেখেছি আমার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত তিনটি অ্যাকাউন্ট, আমার পার্টনারের দুটি আর আমার চেম্বারের একটা অ্যাকাউন্ট।
আদালতের আদেশ অনুসারে মঙ্গলবার মামলাটি কার্যতালিকায় আসে।
এদিন গ্রামীণ টেলিকম ও শ্রমিক ইউনিয়ন পৃথকভাবে হলফনামা দেয়।
শুনানিতে আইনজীবী আহসানুল করীম বলেন, আইনজীবী ফি নিয়েছেন ১৬ কোটি টাকা। ১০ কোটি টাকা অন্যান্য ফি।
তখন আদালত বলেন, এটা সিম্পল ব্যাপার। আপনি বলেন যে আপনি এত টাকা ফিস নিয়েছেন। বাকিটা দুদক নাকি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে সেটা তাদের ব্যাপার।
আদালত আরও বলেন, ১০ কোটি টাকার বিষয়ে বিস্তারিত বলেন। এত লুকোচুরি কেন। সম্পূর্ণভাবে বলতে হবে নির্দিষ্ট করে।
তখন আইনজীবীরা বলেন, তারা সম্পূরক হলফনামা নিয়ে সবকিছু নিদ্ষ্টি করে উল্লেখ করে দেবেন। এরপর আদালত দুদিন সময় দেন হলফনামা দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
ইএস/আরবি