ঢাকা: ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর লাশ নিয়ে গাইবান্ধা ফেরার সময় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী, গাড়িচালক এবং আহতদের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
হতাহতদের পরিবারের করা এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রোববার (০৭ আগস্ট) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে সড়ক পরিবহন আইনের অধিনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের ফান্ড গঠনে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে জানাতে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও পরিবহন সচিব, আইন সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের রিটে পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
রিটে দৈনিক প্রথম আলোতে ২৬ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার রূপনগরের সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেনের (৫৫) স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪৫) ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীর লাশ নিয়ে আয়নাল হোসেন ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় বাড়িতে ফিরছিলেন। তবে পথে বাসের চাপায় আয়নালও বাড়ি ফিরেছেন লাশ হয়ে। একই দুর্ঘটনায় ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালকও নিহত হন। বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালকের নাম দ্বীন ইসলাম (৪৫)। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানায়। দুর্ঘটনার পর গতকাল রাত ৯টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ দুর্ঘটনায় নিহত আয়নাল হোসেনের তিন ছেলে গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিরা হলেন— শহীদ হোসেন (২০), ফরহাদ হোসেন (১৮) ও ফিরোজ হোসেন (২৯)।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ২৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতু এলাকায় পৌঁছালে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বীন ইসলাম ও আয়নাল হোসেনের তিন ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বীন ইসলাম মারা যান।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে ৭ জন রিট করেন।
যাদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে তারা হলেন—ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য ডলি পারভীন, রোজিনা খাতুন, আহত ফরহাদ হোসেন, ফিরোজ হোসেন, ফরিদ হোসেন, আহত দুলফিজুর রহমান রতন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স বাবদ পিপল রিনেমেট অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট কাউন্সিলের পরিচালক আব্দুল আলী বাশার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
ইএস/এমজেএফ