ইফতেখার ফাহমীর ‘টু বি কন্টিনিউড’ আর সোহানুর রহমান সোহানের ‘সে আমার মন কেড়েছে’র পর ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্রের নবাগত নায়িকা তিন্নি সম্প্রতি তৃতীয় ছবিতে সাইন করেছেন। সামিয়া জামান পরিচালিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘ছেলেটি’তে অভিনয় করছেন শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি।
শুধু তাই নয়, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে তিন্নি জানিয়েছেন, আরো দুটি ছবিতে তার অভিনয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত। বাকি আছে শুধু সাইন করা। সাইন করার পর তিনি ছবি দুটোর নাম ঘোষণা করবেন বলে জানান।
কোনোদিন অভিনয় করবেন এরকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না তিন্নির। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি নাটকের শুটিং দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে যান নির্মাতার। ফারুকীর দেওয়া অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেন সানন্দে। প্রায় ছ বছর আগে মেগাসিরিয়াল ‘৫১বর্তী’-তে কাজ করার সময়ই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ডাক আসে। তিন্নি তখন সাড়া দেননি। এতোদিন পর এলেন চলচ্চিত্রে। ক্যারিয়ারের শুরুতে চলচ্চিত্রে না আসার কারণ হিসেবে তিন্নি বলেন, সে সময় আমি সবে কাজ শুরু করেছি। সবকিছু বুঝে উঠতে পারিনি ঠিকঠাক। অভিনয়েও ততোটা দক্ষতা আসেনি। চলচ্চিত্রে অভিনয় তো আর ছেলেখেলা নয়। পারফর্মিং আর্টের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। এখানে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি দরকার। তাছাড়া তখন টিভিনাটক আর মডেলিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম । চলচ্চিত্রের কাজে যে লম্বা সময়টা দেওয়া দরকার, সেটা আমার জন্য তখন কঠিন ছিল। তবে চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ আমার সবসময়ই ছিল। আমার বাবা ছিলেন এফডিসির কর্মকর্তা।
তিন্নি আরো বললেন, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য যেটুকু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, গত ছয় বছরে মনে হয় তা অর্জন করেছি। সবকিছু ভেবেচিন্তে মনে হলো এখন চলচ্চিত্রে কাজ করা যেতে পারে। এই ভাবনা থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলাম।
চলচ্চিত্রে সম্পৃক্ত হওয়ার ঘটনা জানতে চাইলে তিন্নি বলেন, আমি কিন্তু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এ ছিলাম। অবশ্য সেই উপস্থিতি ছিল খুবই স্বল্প সময়ের। তাই এটাকে চলচ্চিত্রে অভিনয় হিসেবে ধরি না। ‘টু বি কন্টিনিউড’ ছবিটি বানাচ্ছেন ইফতেখার ফাহমী। মিডিয়ায় পা রাখার পর পরই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তার একাধিক নাটকে আমি অভিনয়ে করেছি। তাছাড়া তিনি আমাদের ভাই-বেরাদার। ফাহমী যখন তার ছবির গল্পটা আমাকে বলেন এবং তিনিই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন, এতে আমাকে কাজ করতে হবে। তার সিদ্ধান্ত অমান্য করা আমার পক্ষে সম্ভন নয়। সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি আমার একটি পছন্দের ছবি। প্রায় দু বছর আগে উনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় একটি রেস্টুরেন্টে। তার সঙ্গে ছিলেন খল-অভিনেতা মিশা সওদাগর। সোহানুর রহমান সোহান সেদিনই আমাকে তার একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। তখন নানা কারণে তার প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সময় হয়েছে বলে তার ছবিতে কাজ করছি। আর সামিয়া জামানকে আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম। তার কথাবার্তা স্মার্টনেস আমার খুব পছন্দ। তিনি যখন আমাকে তার সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবিতে অভিনয়ের জন্য বলেন, আমি সানন্দে তাতে রাজি হয়ে যাই।
তিন্নি এরই মধ্যে ‘সে আমার মন কেড়েছে’ এবং ‘টু বি কন্টিনিউড’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। বড়পর্দায় কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড়পর্দার সব আয়োজনই বড় বড়। এখানে ধৈর্য সহকারে লম্বা সময় নিয়ে কাজ করতে হয়। চলচ্চিত্রে কাজের নির্ধারিত কোনো সময়সীমা নেই। যতোক্ষণ কাজটা শেষ না হবে, ততোক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে হবে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করাটা যে এতোটা পরিশ্রমের কাজ, তা ছিল আমার ধারণার বাইরে। অনেক কিছুই শিখছি আমি। আরেকটা কথা, চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে হিরো-হিরোইনকে ভীষণ সম্মান দেওয়া হয়। দূর থেকে ফিল্মের লোকদের সম্পর্কে অনেকে অনেক রকম কথা বলেন। আমি কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, কাজের ব্যাপারে তারা অনেক বেশি আন্তরিক। অনেক বেশি পেশাদার মনোভাব নিয়ে তারা কাজ করেন।
বিয়ে ও সন্তান হওয়ার পর তিন্নি চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, বিয়ের পর নায়িকার কদর কমে যায়। এ প্রসঙ্গে তিন্নি বলেন, কথাটা বোধহয় পুরোপুরি ঠিক নয়। তাহলে সুচিত্রা সেন আর শাবানা এতো বড় হিরোইন হতে পারতেন না। এটা আসলে আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। এখানে আমি জয়ী হতে চাই। হেরে গেলে এখান থেকেই মিডিয়াকে বিদায় জানাব।
আপনি চলচ্চিত্রের কাজে ব্যস্ত থাকলে আপনার সন্তান ওয়ারিশাকে দেখবে কে? তিন্নির উত্তর, আমিই দেখব। কর্মজীবী মায়েদের কি সন্তান থাকে না! ওয়ারিশার জন্মের পর যখন তার মাকে না হলে চলত না, আমি তখন প্রায় বছরখানেক মিডিয়ায় কোনো কাজ করিনি। সে খানিকটা বড় হয়ে ওঠার পরই আবার কাজ শুরু করি। তিন্নির কাছে জানতে চাওয়া হলো, প্রায়ই অভিনেতা হিল্লোলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য। তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হতেই পারে। সুযোগসন্ধানী কেউ কেউ এ বিষয়টিকে বড় করে দেখে এবং নানারকম বাজে কথা প্রচার করে। আমরা একসঙ্গেই আছি, অথচ কেউ কেউ আমাদের ডিভোর্স পর্যন্ত দিয়ে দেয়। এসব বিষয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। এটুকু শুধু বলবো, আমরা ভালো আছি। আমাদের একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস অটল আছে।
তিন্নি অভিনীত ছবি দেখার জন্য দর্শকদের আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। চলতি বছরের শেষ দিকে সোহানুর রহমান সোহানের ‘সে আমার মন কেড়েছে’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর একে একে আসবে ‘টু বি কন্টিনিউড’ ও ‘ছেলেটি’। এরই মাঝে হয়তো তিন্নি আরো কিছু ছবিতে কাজ করা শুরু করবেন। ঢালিউডে নায়িকা-খরা তিন্নি কতটুকু দূর করতে পারে, সেটাই হলো দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮০০, আগস্ট ০৮, ২০১০