‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি। ’ এ গানের আবেগময় সুর দিয়ে যিনি আমাদের চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি আলতাফ মাহমুদ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ঢাকা শহরের গেরিলা অপারেশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ক্র্যাক প্লাটুনেরও তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় যোদ্ধা। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠান তৈরি করে গোপনে মুক্তাঞ্চলে পাঠিয়ে দেন।
১৯৭১ সালে ৩০ আগস্ট হানাদার বাহিনী স্বাধীনতার এ সূর্যসন্তান শহীদ আলতাফ মাহমুদকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।
তার অন্তর্ধান দিবস উপলক্ষে ৩০ আগস্ট ২০১০ বিকেলে ঢাকার সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক ২০০৯ ও ২০১০ প্রদান করে।
২০০৯ সালের পদক প্রদান করা হয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, স্বরলিপিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সুধীন দাশকে। আর ২০১০ সালের পদক পান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শিল্পী বিপুল ভট্টাচার্য। বিপুল ভট্টাচার্য বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে দেওয়া হয় ১০ হাজার করে টাকা, ক্রেস্ট ও উত্তরীয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আলতাফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ খান এবং প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মফিদুল হক, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও কামাল লোহানী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা আরা মাহমুদ, মেয়ে শাওন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় আলতাফ মাহমুদের সুরে শিমূল ইউসুফের কণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহিন সামাদ। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের জীবনী পাঠ করেন আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ।
সুধীন দাশ পুরস্কার হিসেবে প্রাপ্তির টাকা অসুস্থ শিল্পী বিপুল ভট্টাচার্যের চিকিৎসার জন্য দিয়ে দেন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিপুল ভট্টাচার্যের চিকিৎসার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। বিপুল ভট্টাচার্যের অনুপস্থিতিতে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন তার স্ত্রী কুমকুম ভট্টাচার্য। ওই অনুষ্ঠানেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে বিপুল ভট্টাচার্যের চিকিৎসার জন্য তার স্ত্রীর কাছে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রত্যেকেই আলতাফ মাহমুদের সঙ্গীতজীবন, ব্যক্তিগতস্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০২১, আগস্ট ৩১,২০১০