মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে ছবিটি দেখল। ছবি নিয়ে আলোচনাপর্বেও দর্শকের কমতি ছিল না।
২০০৮-০৯ সালে চিত্রায়িত এই কাহিনীচিত্রটির পটভূমি হিসেবে এসেছে ২০০৫-০৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে সংঘটিত কিছু ঘটনা। ছবিটি সম্পর্কে তারেক মাসুদ বললেন, আমি আমার জানাশোনা আর উপলব্ধি নিয়েই ছবি বানাই। ‘রানওয়ে’ ছবিটি আমার দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের ফসল। এখানে উগ্র ধর্মীয় মতবাদ তরুণদের কীভাবে গ্রাস করে তার কিছু খ-চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমি নিজে মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। আমাদের ধর্ম সহিষ্ণুতা ও উদারতার কথা বলে। কিন্তু ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কীভাবে তরুণদের ভুলপথে নিয়ে আসা হচ্ছে, কেন একজন তরুণ ওই পথে যাচ্ছে, তা আমি খুব সহজ-সরলভাবে ‘রানওয়ে’ ছবিতে তুলে ধরতে চেয়েছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তথাকথিত আর্টফিল্ম নির্মাণে বিশ্বাসী নই। আমি সাধারণ দর্শকদের জন্যই ছবি বানাই। যারা নাচ-গানসহ ছবি বানান তাদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা আছে। কারণ তাদের করা কাজটিও অনেক কঠিন। আমি বাস্তবভঙ্গিতে সহজ-সরলভাবেই সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, ‘রানওয়ে’ ছবিটি বানিয়েছি এই সময়ের তরুণ প্রজন্মের জন্য। তাদের সামনে এখন কোনও আদর্শ নেই। সান্ত¡না বা অবলম্বনের কোনও জায়গা নেই। তরুণ প্রজন্মের এই সংকটই আমার ছবির প্রধান বিষয়। তাই তরুণ দর্শকরা এ ছবিটি দেখলে আমি আনন্দিত হবো।
‘রানওয়ে’ ছবি কেন্দ্রীয় চরিত্র রুহুল। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সংলগ্ন একচালা ঘরে রুহুল ও তার পরিবার বসবাস করে। তার মা রহিমা ুদ্রঋণ সমিতির মাধ্যমে একটি গাভী কিনে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। রুহুলের বোন ফাতেমা পোশাক রপ্তানি কারখানায় কাজ করে। একমাস হলো তার বাবা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির সন্ধানে গিয়ে নিরুদ্দেশ। বেকার, কিছুটা হতাশ অথচ আদর্শবাদী রুহুল চাকরি খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে এবং উড়োজাহাজের ছায়ায় দিন কাটায়। মাঝে মধ্যে সে মামাকে সাইবার ক্যাফের ব্যবসায় সাহায্য করে এবং ইন্টারনেট শেখার চেষ্টা করে। সেখানে দৃঢ় অথচ শান্ত মেজাজের কম্পিউটার দক্ষ আরিফের সাথে তার ক্রমশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আরিফ উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যে জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে রুহুলকে উদ্বুদ্ধ করে। নতুন আদর্শে উজ্জীবিত রুহুল বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অবশেষে জীবনের গভীরতর অভিজ্ঞতা উপলব্ধির দিকে এগিয়ে যায়।
‘রানওয়ে’ ছবির প্রধান প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নতুন শিল্পীরা। তাদের মধ্যে রুহুল চরিত্রে ফজলুল হক, রহিমা চরিত্রে রাবেয়া আক্তার মনি, আরিফ চরিত্রে আলী আহসান উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, নাজমুল হুদা বাচ্চু, মোসলেম উদ্দিন, নাসরিন আক্তার ও রিকিতা নন্দিনী শিমু। এছাড়া অতিথি শিল্পী হিসেবে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা।
প্রিমিয়ার শো শেষে ‘রানওয়ে’ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মুক্ত আলোচনা। এতে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, তথ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সালাউদ্দিন জাকি, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক হাবিবুর রহমান খান। আলোচনায় ছবিটির গল্প ও নির্মাণশৈলীর প্রশংসা করেন সবাই।
এ বছরের শেষ নাগাদ ছবিটি দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ইংরেজি সাবটাইটেলসহ বহির্বিশ্বেও প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা শ্রুতিচিত্র সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১০১, অক্টোবর ০২, ২০১০