অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে থেকে তার প্রতি অসম্ভব মায়া অনুভব করে মানুষ আধুনিক যন্ত্রের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। আর এই যন্ত্র ও মানব প্রেমের কাল্পনিক চিত্রই ফুটে উঠেছে এস শংকর পরিচালিত ‘রোবট’ ছবিতে।
ভারতের দণিী ছবির ব্যতিক্রমী নির্মাতা এস শংকর তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন অনেক আগেই। তার পরিচালনায় ‘অপরিচিত’, ‘হিন্দুস্তানি’, ‘নায়ক’, ‘শিবাজি : দ্য বস’ ছবি ব্লকবাস্টার হিট হয়েছে। নিজের প্রতি বিশ্বাস থেকেই শংকর ২০০০ সালে সায়েন্স ফিকশন ও অ্যাকশন ঘরানার ‘রোবট’ ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। প্রথমদিকে নায়ক-নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তার ভাবনায় ছিল শাহরুখ খান ও প্রীতি জিনতা। এমনকি তখন কিং খান ছবিটি প্রযোজনাও করতে আগ্রহী হয়েছিলেন। পরে শাহরুখ বাজে স্ক্রিপ্টের দোহাই ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান।
শাহরুখের এমন সিদ্ধান্তে শংকর বিপদে পড়ে যান। কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে শংকর হাত বাড়ান তার বহুদিনের বন্ধু রজনীকান্তর দিকে। তামিল ছবির কিংবদন্তি রজনীকান্ত শংকরের ডাকে সাড়া দিয়ে ‘রোবট’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। আর প্রযোজক হিসেবেও শংকর পেয়ে যান সান পিকচার্সের কর্ণধার কল্যানিধি মরনকে। সান পিকচার্স শংকরের সবকিছুতে মুগ্ধ হয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা লগ্নি করে ছবির পেছনে। সান পিকচার্যের দাবি, ১৫০ কোটি রুপিতে নির্মিত ‘রোবট’ ছবিটি এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি হতে যাচ্ছে। তাদের দাবি যে মোটেও অযৌক্তিক নয় সেটা বোঝা যায় খুব সহজেই। রোবট ছবিতে অভিনয়ের জন্য সাবেক মিস ইউনিভার্স ঐশ্বরিয়া রাই নিচ্ছেন ৬ কোটি রুপি। অতীতের যে কোনও নায়িকার পারিশ্রমিকের রেকর্ড ভঙ্গ হচ্ছে এর মাধ্যমে। ছবিতে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। স্পেশাল ইফেক্ট ও থ্রি-ডি প্রযুক্তির প্রচুর ব্যবহার থাকছে এই ছবিতে।
তামিল ছবির মেধাবী নির্মাতা শংকর এর আগে রজনীকান্তকে নিয়ে ‘শিবাজি : দ্য বস’ নির্মাণ করেছিলেন।
সে ছবিতে রজনীকান্তের অসামান্য অভিনয় ছবিটিকে ব্যবসাসফল করেছিল। তবে রোবট ছবিতেই রজনীকান্তকে প্রথমবারের মতো তার বিখ্যাত ট্রেডমার্ক গোঁফবিহীন অবস্থায় দেখা যাবে। রোবট ছবির মাধ্যমেই ঐশ্বরিয়া প্রথমবারের মতো জুটিবদ্ধ হলেন তার দ্বিগুণ বয়সী রজনীকান্তর সঙ্গে। অবশ্য মানিশ মালহোতার কস্টিউম ডিজাইন করা পোশাকে এবং পরিচ্ছন্ন মেকআপ ও গেটআপে রজনীকান্তকে মনে হয়েছে টগবগে তরুণ। ছবির ট্রায়ালে তাদের নাচ ও রোমান্টিকতা দেখে চমকে উঠেছেন অনেকেই। সমালোচকরাও রজনীকান্ত-ঐশ্বরিয়া জুটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অবশ্য ঐশ্বরিয়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রজনীকান্ত মালয়েশিয়ায় ‘রোবট’ ছবির অডিও প্রকাশনার অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঐশ্বরিয়া তার দেখা বিশ্বসুন্দরীদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা। ঐশ্বরিয়া কোনও সাধারণ মেয়ে নন, তিনি তার সৌন্দর্য ও মেধা দিয়ে জয় করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়।
রোবট ছবির মিউজিক কম্পোজিশন করেছেন বলিউডের সুরসম্রাট এ আর রহমান। তার করা গানগুলো ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইন্টারনেটে সর্বাধিক ডাউনলোড হওয়া গানের তালিকায় প্রথম দিকে স্থান করে নিয়েছে রোবট ছবির গানগুলো।
এদিকে ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে রোবট ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের সর্বাধিক দেশে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রোগৃহে প্রদর্শিত হবে। হিন্দিসহ তামিল ও তেলেগু ভাষায়ও ‘এন্ধিরান’ নামে মুক্তি দেওয়া হবে ছবিটি।
যে ছবি নিয়ে এত হইচই ও উত্তেজনা, কী আছে সে ছবিতে? ‘রোবট’ ছবির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে এক যন্ত্রমানবের সাথে একজন মর্ত্যরে সুন্দরীর প্রেম। রোবটরূপী যন্ত্রমানবটি হচ্ছে চিঠঠি (রজনীকান্ত) এবং সুন্দরী হচ্ছেন সানা (ঐশ্বরিয়া)। সাধারণ মানুষের মতই চিঠঠি হাঁটতে, ঘুরতে ও স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। তবে তার স্মৃতিশক্তি মানুষের চেয়ে প্রখর, এক নিমিষেই সে যে কোনও জিনিস মুখস্থ করে ফেলতে পারে। টেলিফোন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও উপাত্ত চিঠঠির মেমোরিতে গেঁথে যায় অল্প সময়ের মধ্যে।
শারীরিকভাবে ও স্মৃতিশক্তির দিক থেকে চিঠঠি অনেক শক্তিশালী হলেও চিঠঠির মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রেম-ভালোবাসা নেই, নেই সামান্যতম আবেগ। এ কারণে চিঠঠির স্রষ্টা বিজ্ঞানী ড. ভাসি (ড্যানি ডেনজাপ্পা) রোবটটির মধ্যে মানুষের কিছু আবেগ সঞ্চার করে দেন। ফলে চিঠঠির মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। একপর্যায়ে সে সুন্দরী সানার প্রেমে পড়ে যায়। শুরু হয়ে যায় নতুন গল্প। রুপসী সানার প্রতি ভালোবাসা চিঠঠিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। তবে সে ভুলে যেতে শুরু করে তার স্রষ্টা ড. ভাসিকে। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে দূরত্ব বেড়ে চলে। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে ছবির গল্প।
বলিউডে ১ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছে ‘রোবট’। ছবিটি বক্স অফিসে কেমন সাড়া ফেলেছে, জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক দিন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬২০, অক্টোবর ০৩, ২০১০