ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

লালন সাঁই আমার প্রিয় একটা বিষয় : গৌতম ঘোষ

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১০

খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন তার নতুন ছবি ‘মনের মানুষ’-এর বিশেষ প্রদর্শনী উপলক্ষে। চ্যানেল আইয়ের এক যুগে পদার্পণ উৎসবে ছবিটি স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত সফরে গৌতম ঘোষ সময় কাটিয়েছেন ব্যস্ততার মধ্যে।

‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও  ‘মনের মানুষ’ নির্মাণ উপলক্ষে অনেকবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। কিছুদিন আগেও এসেছিলেন ‘মনের  মানুষ’ ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেয়ার কাজে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার অনুভূতি : ‘আসলে বাংলাদেশ তো আমার জন্মভূমি। আমি ফরিদপুরের ছেলে। নিজের দেশে পা রাখার অনুভূতি সবসময়ই চমৎকার। নিঃশ্বাস নিতে আরাম বোধ করি। ’  

ছবি প্রদর্শনীর আগে স্টার সিনেপ্লেক্স ও চ্যানেল আইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গৌতম ঘোষ দুই দফায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন। সেই আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশ পাঠকের জন্য।

বাংলানিউজ:  ‘মনের মানুষ’ ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।

গৌতম ঘোষ:  লালন সাঁই আমার প্রিয় একটা বিষয়। চলচ্চিত্র নির্মাণে আসার আগে থেকেই লালনের জীবন ও দর্শনের প্রতি আমার কৌতূহল। পড়াশোনাও করেছি কিছু। বহুবার ঘুরেছি লালনের আখড়ায়। বাউল-সাধকদের সঙ্গে কথা বলেছি রাতের পর রাত জেগে, মেলামেশা করেছি অন্তরঙ্গভাবে। চলচ্চিত্র নির্মাণে আসার পর থেকেই ভাবছিলাম, লালনকে নিয়ে কিছু করা যায় কিনা! কয়েক বছর আগে ‘দেশ’ পত্রিকায় চোখে পড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস ‘মনের মানুষ’। উপন্যাসটি পড়া শেষ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি এটা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করব। কাগজ-কলম নিয়ে সেদিনই বসে পড়লাম চিত্রনাট্য রচনার কাজে। ছবিটি প্রযোজনার জন্য এগিয়ে এলেন আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের হাবিবুর রহমান খান। পরে তার মাধ্যমেই প্রযোজনায় যুক্ত হন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ফরিদুর রেজা সাগর।

বাংলানিউজ:  লালনকে নিয়ে এর আগেও তৈরি হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র। আপনি কি সেগুলো দেখেছেন?

গৌতম ঘোষ:  না, দেখা হয়নি। তবে লালনকে নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে নির্মিত বহু ডকুমেন্টারি আমি দেখেছি।

বাংলানিউজ :  অভিনয়শিল্পীরা কি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন?

গৌতম ঘোষ:  প্রত্যাশার শেষ নেই। প্রত্যাশার প্রকৃতিই হলো তা ক্রমবর্ধমান। তবে অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে যা পেয়েছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। আমি ভাগ্যবান এই কারণে যে, আমার ছবিকে শিল্পীরা সবসময় সিরিয়াসভাবে নেন। যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই তারা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান এবং নিজেদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করেন।

বাংলানিউজ:  আলাদাভাবে তাদের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

গৌতম ঘোষ:  আলাদাভাবে কাকে রেখে কার কথা বলি! কলকাতার ব্যস্ত নায়কদের অন্যতম প্রসেনজিৎ। ‘মনের মানুষ’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব তিনি লুফে নেন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেন। প্রায় ৭-৮ মাস তিনি কোনো ছবিতেই কাজ করেননি। চেহারায় লালনের ছায়া নিয়ে আসার জন্য প্রসেনজিৎ এ সময় চুল-দাঁড়ি কাটাও বন্ধ করে দেন। তার অভিনয়নৈপুণ্যে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশের রাইসুল ইসলাম আসাদ ও চম্পা আমার পছন্দের পারফর্মার। সিরাজ সাঁই চরিত্রটি আসাদ তার আশ্চর্য অভিনয়ক্ষমতায় পুরোপুরি জীবন্ত করে তুলেছেন। লালনের মায়ের ভূমিকায় খুবই কম সময় পর্দায় ছিলেন চম্পা। অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময় সংশয়ে ছিলাম, এতো ছোট চরিত্রে তিনি অভিনয় করবেন কিনা! চম্পা চরিত্রটি আনন্দের সঙ্গেই করেছেন এবং যেটুকু সময় পর্দায় ছিলেন তাই যে যথেষ্ট, সেটা প্রমাণ করেছেন। ‘মনপুরা’ ছবিটি দেখার পর চঞ্চল চৌধুরী আমার চোখে পড়ে। তার অভিনয়ে আমি অভিভূত। ছোট মেয়ে তথৈ, কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়নি। লালনের বালিকাবধূর ভূমিকায় সে যা করেছে, কে বলবে এটাই তার প্রথম অভিনয়। কোনো কাজে আমি কখনো তৃপ্ত হই না, তবে সবার অভিনয়ে আমি সন্তুষ্ট।

বাংলানিউজ:  ‘মনের মানুষ’ ছবিতে লালনের ঘনিষ্ঠ দু-একটি চরিত্রকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো লালনের পালিত কন্যা। ছবিতে চরিত্রটি একেবারেই দেখানো হয়নি। এর কারণ কী?

গৌতম ঘোষ:  আমি ছবিটি বানিয়েছি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে। উপন্যাসটিতে বিভিন্ন চরিত্র যেভাবে এসেছে, ছবিতে তাই অনুসরণ করা হয়েছে। উপন্যাস অবলম্বনেই আমি চিত্রনাট্য তৈরি করেছি। কাজেই যদি কোনো চরিত্র বাদ পড়ে থাকে সেই দায় বোধহয় আমার ওপর বর্তায় না।

বাংলানিউজ:  ‘মনের মানুষ’ ছবিটি নিয়ে আপনার আগামী পরিকল্পনা কি?

গৌতম ঘোষ:  ছবিটি নির্মাণের মাধ্যমে আমি আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। এখন ছবিটি কীভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে প্রডিউসারদের ওপর। আগামী ৩ ডিসেম্বর ছবিটি বাংলাদেশ ও ভারতে মুক্তি দেওয়া হবে। ছবিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানোর জন্য ইংরেজি সাবটাইটেল যোগ করার কাজ শুরু হয়েছে। ‘মনের মানুষ’ ছবিটি দেখে দর্শক লালনের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে যদি একটা স্পষ্ট ধারণা পায় তাহলেই আমি সার্থক।

বাংলানিউজ:  নতুন ছবির কাজে হাত দিচ্ছেন কবে?

গৌতম ঘোষ:  এখনো দিন-তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। হাতে বেশ কয়েকটা স্ক্রিপ্ট আছে। কোনটার কাজ আগে ধরবো আর কোনটার কাজ পরে করবো, সেই সিদ্ধান্তও এখনো নিতে পারিনি। কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই জানাবো।

বাংলানিউজ:  বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে আপনার ধারণা?

গৌতম ঘোষ:   পরিষ্কার ধারণা নেই। সব জায়গাতেই ভালো-মন্দ দুটো ধারা থাকে। কখনো একটি ধারা জোরদার হয় কখনো অন্যটি। আসলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে ভালো ছবি বানানোর প্রবণতা বাড়ছে বলে শুনেছি। এটা খুবই আনন্দের বিষয়। কিছুদিন আগে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ ছবিটি দেখলাম। বেশ ভালো লেগেছে। চিত্রায়ন চমৎকার। প্রতি বছর যদি এরকম পাঁচটি ছবি তৈরি হয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ধারাই তাহলে পাল্টে যাবে।

বাংলাদশে স্থানীয় সময় ১৩৫০, অক্টোবর ৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।