অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম অভিনয় করলেন আশরাফ শিশিরের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ডিজিটাল ফরমেটে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সাদাকালো চলচ্চিত্র ‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’-তে । সত্য কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে একজন প্রতাপশালী জমিদারের চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।
শাফায়েত খান নামের এই চরিত্রের মানুষটি পদ্মা নদীর পাড়ে একটি রেলওয়ে জংশনসমৃদ্ধ শহরের প্রভাবশালী মানুষদের মধ্যে একজন। যিনি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিসানী হানাদার বাহিনীর পে কাজ করেন, পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। ৮০‘র দশকে তার নেতৃত্বে কিছু মুষ্টিমেয় ফতোয়াবাজ স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এখানকার একটি পতিতালয় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করে সেখানে গড়ে তোলে একটি মসজিদ। হাজার মুসল্লী সেখানে আজও নামাজ পড়ে। উচ্ছেদ করা সেই পতিতালয়ের যৌনকর্মীরা ছড়িয়ে পড়ে সারা শহরে। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ তাদের মধ্যে সুন্দরীদের দখল করে আজীবন রতিা করে নেয় । সারা শহর পরিণত হয় পতিতালয়ে। তাদেরই একজন রূপভান। তাকে এবং মালতী নামের একজন হরিজনকন্যাকে একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে আটকে রাখে শাফায়েত। ধরা পড়ে গেলে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে । তারপর একে একে তার স্বেচ্ছাচারিতা বাড়তে থাকলেও এক পর্যায়ে পাঘাতগ্রস্থ হয়ে চিরতরে বিছানায় পড়ে যায় এক সময়ের মতাধর মানুষটি। সেই সুযোগে তার জায়গাটি দখল করে নেয় তার ছোট ভাই শামসুদ্দিন খান। অন্যদিকে সারাজীবন আগলে রাখা তার মেধাবী সন্তানটি একটি সিনেমা বানানোর স্বপ্ন নিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করে একজন নারীর জন্য, যাকে সে কোনদিনও দেখেনি।
‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’ ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অঞ্জন দত্ত, আজাদ আবুল কালাম, স্বাধীন খসরু, মাসুম আজিজ, কাজী আরিফ, মাজনুন মিজান, ইমতু, সানি, রোশনী, জগন্ময় পালসহ দুই বাংলার অনেক শিল্পী।
ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে আজাদ আবুল কালাম বললেন, শাফায়েত চরিত্রটিতে অভিনয় করে আমি বেশ তৃপ্তি পেয়েছি। চরিত্রটার মধ্যে ডাইমেনশন আছে। সব মিলিয়ে ‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’ ছবিটি নিয়ে আমার প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমি এই টিমে কাজ করতে পেরে আনন্দিত।
ছবির বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু, অঞ্জন দত্ত, লিংকন (আর্টসেল), শিরোনামহীন, সুমী (লালন), এলিটা, শোয়েব, সুবীর নন্দী, কনক আদিত্য, রাজু এবং সামিরা আব্বাসী। নেপথ্য বর্ণনায় থাকছেন আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মোস্তাফা। চলচ্চিত্রটির মিউজিক অ্যালবাম নভেম্বরে বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন সঙ্গীত পরিচালক শিরোনামহীন ব্যান্ডের বেজিস্ট ও টিমলিডার জিয়াউর রহমান জিয়া।
আজকের এই ডিজিটাল যুগে কেনো সাদাকালো ফরম্যাটে চলচ্চিত্র নির্মাণ? এ প্রশ্নের উত্তরে নির্মাতা আশরাফ শিশির বলেন, সাদাকালোর প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক। রঙ নিয়ে খেলা করতে আমার ভালো লাগে। আমি চাই আমার প্রতিটি চলচ্চিত্রে একটি করে বিশেষ রঙের প্রাধান্য থাকুক। এ জন্যই ‘আমরা একটি সিনেমা বানাবো’ ছবিটি সাদাকালো। আরেকটিচ কারণ হচ্ছে, কেবল রঙিন কলেবর করলেই যে একটি ছবি শিল্পোত্তীর্ণ হবে তা আমি মনে করি না। আমি জীবন ঘনিষ্ঠ একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছি, যেখানে মানুষ তার নিজস্ব রঙ খুঁজে নেবে। আর ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী স্বপ্নের রঙ সাদাকালো, তাই স্বপ্নের চলচ্চিত্রটি আমি সাদাকালোতেই নির্মাণ করছি।
আগামী ডিসেম্বরে ছবিটি একই সঙ্গে ডিজিটাল ও ৩৫ মি.মি. ফরমেটে বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্সে মুক্তি পাবে। ছবিটি মুক্তির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চ্ত্রি উৎসবে অংশ নেবে বলে পরিচালক জানান।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৫১৫, অক্টোবর ০৯, ২০১০