ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ : ৭৫ বছর ধরে সমান জনপ্রিয়!

রক্তিম দাশ, কলকাতা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০

মা দুর্গার আহ্বান শুরু হয় মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে। আর এই দিনটির সকালে আজও যদি আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্র থেকে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত না হয়, তবে বাঙালি তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, যেন মনে করতে পারেন না মা আসছে।



বিশ্বের আর কোনও বেতার তরঙ্গে এতদিন ধরে নিয়ম করে বছরে একটি দিন একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়, এমন ঘটনা বোধহয় বিরল। ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ভারতে অল ইন্ডিয়া রেডিও মিডিয়াম ওয়েভ প্রচার তরঙ্গে এই অনুষ্ঠানের সূচনা। আদতে এটি দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন কেন্দ্র করে চন্ডীপুরাণ থেকে পাঠের অনুষ্ঠান। আর এই অনুষ্ঠানে চন্ডীপাঠ করেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র অমর হয়ে গেলেন বাঙালির কাছে। মহালয়ার ভোরে তার উদাত্ত কণ্ঠ, বাণীকুমারের লেখা আর পঙ্কজ মল্লিকের মতো শিল্পীর গান শোনার জন্য আজও উদগ্রীব থাকেন বহু মানুষ।

বাণীকুমার রচিত ও পঙ্কজ মল্লিকের সুরারোপিত এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভাষ্য নিয়ে ১৯৩৪ সালে দুর্গা পূজার যষ্ঠীর দিন প্রচারিত হয় একটি সঙ্গীত আলেখ্য। এটি প্রচারিত হবার পর তা অবিভক্ত বাংলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপরই আত্মপ্রকাশ করে আজকের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এ অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের অসাধারণ ভাষ্য পাঠ ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’, ‘যা দেবী সর্বভূতেষু...’ মানুষকে আজও করে উৎসবমুখর।

২০০৫-এ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র চলে গেছেন পরলোকে। তবু মহালয়া আর দুর্গা পূজায় আজও বাঙালির আইকন তিনি। এ বিষয়ে বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমারকেও তিনি পিছনে ফেলে দিয়েছেন।

প্রথম দিকে অনেক বছর রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় মহালয়ার ভোরে সব শিল্পীদের নিয়ে আকাশবাণীর গারস্টিন প্লেসের পুরাতন স্টুডিও থেকে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হতো। পরে তা রেকর্ডিং করে পরিবেশন করা হয়। বর্তমানে এর সিডি ও ডিভিডি বাজারে নিয়ে এসেছে এইচএমভি।

সত্তরের দশকে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ একবার বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাতিল করে দিয়ে মহানায়ক উত্তম কুমারকে দিয়ে ভাষ্য পাঠ করিয়ে নতুনভাবে এই অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপক জনরোষ দেখা দেয়। খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা মহানায়ককে ব্যাপক তিরস্কার হজম করতে হয় তার অগণিত ভক্তের কাছ থেকে। শেষে উত্তম কুমার ও আকাশবাণীকে ক্ষমা চাইতে হয়। আকাশবাণী আর দ্বিতীয়বার সাহস দেখাননি মহানায়কের অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার করার।

পরের বছর থেকে আবার ফিরে আসে বাণীকুমার-পঙ্কজকুমার মল্লিক আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিনা বিজ্ঞাপনেই শুনে চলেছে এই অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৪০, অক্টোবর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।