গাজীপুর: কোন নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নয়, একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের অডিশনে বিচারকের আসনে বসে সত্যিকারেই কেঁদে ফেললেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। মা-বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গভীরভাবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন।
বুধবার গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের শাল-গজারির ছায়া ঘেরা পাখির কল-কাকলী মুখর পরিবেশে গিভেন্সী গ্রপের বয়স্ক পুণর্বাসন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চ্যানেল আই’র সেরা কণ্ঠ’র আয়না পর্বের অডিশনে এ ঘটনা ঘটে।
অডিশন বিকেলে শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা অবদি। সেরা কন্ঠ’র গানের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পর্বে বাছাইয়ের পর শীর্ষ ৭ প্রতিযোগীকে নিয়ে করা হয় ওই অডিশন। অডিশন দেখতে অন্যান্যের সঙ্গে দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বয়স্ক পূণর্বাসন কেন্দ্রের শতাধিক বাসিন্দাও।
যেসব বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার সন্তান থাকতে নিঃসন্তানের মত তারা অনাদর-অবহেলায় কাটাচ্ছেন জীবনের পড়ন্ত বেলা, কাছের মানুষদের নানা গঞ্জনা সইতে না পেরে একেবারে অসহায় হয়ে পরেছেন, বয়সের ভারে নুয়ে পরেছেন- তাদের অনেকেরই শেষ আশ্রয় ওই বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। প্রিয় সন্তান আর স্বজনদের নিত্য অবহেলায় দূরে সরে আসা এসব মা-বাবার উপস্থিতিতেই করা হয়েছে সেরা কন্ঠের আয়না পর্বটি।
অডিশনে প্রতিযোগিদের গানের বিষয়ও ছিল মা-বাবা।
উপস্থিত প্রত্যদর্শীরা বাংলানিউজকে জানান, অনুষ্ঠানের শুরুতেই রুনা লায়লা সন্তানদের প্রতি মা-বাবার ভালবাসার কথা, তাদের অবদানের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা’র অবদান কখনোই শোধ করা যায় না। আমি নিজেও মা হয়েছি। সহজেই বুঝতে পারি তারা কত কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেন। সন্তানদেরও তা বুঝা উচিত। ’
তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে গেলে মা এখনও পথ চেয়ে বসে থাকেন কখন বাসায় ফিরবো। মাকে কখনো একা থাকতে দেই না। যতটুকু সম্ভব আমরা তাকে সঙ্গ দেই। ’
ইমন সাহাও বললেন তার মায়ের কথা। বললেন, ‘এখনও বাইরে যাওয়ার সময় মাকে বলে, আশীর্বাদ নিয়ে বের হই। যত রাতই হোক, মা আমার জন্যে অপো করে। মাকেও আমি বাসায় ফেরার কথা জানিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করি। আর সেই মা কোনও কারণে কষ্ট পাক তা কখনই চাই না। ’
রুনা ও ইমন আশা করেন, বয়স্ক পূণর্বাসন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত অডিশনটি চ্যানেল আই’এ প্রচারের সময়ে ওই কেন্দ্রে আশ্রিত মা-বাবাকে অনেক তাদের নিজ সন্তানদের অনেকেই হয়তো দেখতে পাবেন। হয়তো অনেক সন্তানের ভুল ভাঙ্গবে। মা-বাবাকে নিজ আশ্রয়ে ফিরিয়ে নেবেন।
সেরা কন্ঠে’র ইভেন্ট এক্সিকিউটিভ সাজ্জাদ হোসেন শোয়ব বাংলানিউজকে জানান, সারা দেশ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ১১০জন প্রতিযোগিকে বাছাই করা হয়। প্রতিযোগিতার আয়না পর্বে ‘টপ সেভেন’ প্রতিযোগী রয়েছে। এদের মধ্য থেকে বাছাই ও দর্শক- শ্রোতাদের (এসএমএস) ভোটিংয়ের মাধ্যমে সেরা কণ্ঠ নির্বাচিত করা হবে। আগামী ৯ ডিসেম্বর চট্রগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সেরা কন্ঠের ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে যা চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, অক্টাবর ২১, ২০১০