কোনও নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নয়, একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের অডিশনে বিচারকের আসনে বসে সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। মা-বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গভীরভাবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
২১ অক্টোবর বুধবার গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের শাল-গজারির ছায়াঘেরা পরিবেশে গিভেন্সী গ্রুপের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চ্যানেল আইর সেরা কণ্ঠের আয়না পর্বের অডিশনে এ ঘটনা ঘটে।
অডিশন বিকেলে শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সেরা কন্ঠর গানের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পর্বে বাছাইয়ের পর শীর্ষ সাত প্রতিযোগীকে নিয়ে করা হয় ওই অডিশন। অডিশন দেখতে অন্যান্যের সঙ্গে দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের শতাধিক বাসিন্দাও।
যেসব বয়োবৃদ্ধ মা-বাবা সন্তান থাকতেও নিঃসন্তানের মতো অনাদর-অবহেলায় দিন কাটাচ্ছেন, কাছের মানুষদের গঞ্জনা সইতে না পেরে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছেন, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন- তাদের অনেকেরই শেষ আশ্রয় ওই বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। প্রিয় সন্তান আর স্বজনদের অবহেলায় দূরে সরে আসা এসব মা-বাবার উপস্থিতিতেই করা হয়েছে সেরা কণ্ঠের আয়না পর্বটি। অডিশনে প্রতিযোগীদের গানের বিষয়ও ছিল মা-বাবা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রুনা লায়লা সন্তানদের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসার কথা, তাদের অবদানের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘বাবা-মার অবদান কখনই শোধ করা যায় না। আমি নিজেও মা হয়েছি। সহজেই বুঝতে পারি তারা কত কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেন। সন্তানদেরও তা বোঝা উচিত। ’
তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে গেলে মা এখনও পথ চেয়ে বসে থাকেন কখন বাসায় ফিরব। মাকে কখনো একা থাকতে দিই না। যতটুকু সম্ভব আমরা তাকে সঙ্গ দিই। ’
ইমন সাহাও বললেন তার মায়ের কথা। বললেন, ‘এখনও বাইরে যাওয়ার সময় মাকে বলে, আশীর্বাদ নিয়ে বের হই। যত রাতই হোক, মা আমার জন্য অপো করেন। মাকেও আমি বাসায় ফেরার কথা জানিয়ে নিজের ঘরে ঢুকি। আর সেই মা কোনও কারণে কষ্ট পাক তা কখনো চাই না। ’
রুনা ও ইমন আশা করেন, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত অডিশনটি চ্যানেল আইয়ে প্রচারের সময়ে ওই কেন্দ্রে আশ্রিত নিজের মা-বাবাকে অনেক সন্তানই হয়তো দেখতে পাবেন। হয়তো অনেক সন্তানের ভুল ভাঙবে। মা-বাবাকে নিজ আশ্রয়ে ফিরিয়ে নেবেন।
সেরা কণ্ঠের ইভেন্ট এক্সিকিউটিভ সাজ্জাদ হোসেন শোয়েব বাংলানিউজকে জানান, সারা দেশ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ১১০ জন প্রতিযোগীকে বাছাই করা হয়। প্রতিযোগিতার আয়না পর্বে ‘টপ সেভেন’ প্রতিযোগী রয়েছেন। এদের মধ্য থেকে বাছাই ও দর্শক-শ্রোতাদের (এসএমএস) ভোটিংয়ের মাধ্যমে সেরা কণ্ঠ নির্বাচিত করা হবে। আগামী ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সেরা কণ্ঠের ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে যা চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করবে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১২৫০, অক্টাবর ২১, ২০১০