নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের নতুন ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছবিটির শুভ মহরত অনুষ্ঠিত হলো ২৩ অক্টোবর শনিবার দুপুরে চ্যানেল আইয়ের তেজগাঁও ভবনে।
‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবির শুভ মহরতে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব নওশাদ করিম চৌধুরীসহ আরো অনেকে। ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান, অভিনেতা তারিক আনাম খান, মুনমুন আহমেদ, মাসুদ আখন্দ, তমালিকা কর্মকার, শামিমা নাজমিন, প্রাণ রায়, বাউলশিল্পী কুদ্দুস বয়াতী ও তার দল, ঘেটুপুত্র কমলার কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেতা শিশুশিল্পী মামুন প্রমুখ।
ছবির নামভূমিকার অভিনেতা মামুন তার সহশিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে ছবির একটি গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে মহরত অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। পরে উপস্থিত অতিথিরা কাপস্টিক উন্মোচনের মাধ্যমে ছবির মহরতের শুভ সূচনা করেন।
ছবিটি প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘প্রায় দেড়শ বছর আগে হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন সঙ্গীত ধারা সৃষ্টি হয়েছিল। মেয়ের পোশাক পরে কিছু রূপবান কিশোর নাচগান করত। এদের নামই ঘেটু। গান হতো প্রচলিত সুরে, কিন্তু সেখানে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। অতি জনপ্রিয় এই সঙ্গীতধারায় নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। বিত্তবানরা এইসব কিশোরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্যে লালায়িত হতে শুরু করেন। একসময় সামাজিকভাবে বিষয়টা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। হাওর অঞ্চলের শৌখিন মানুষ জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও ঘেটুপুত্র নিজের কাছে রাখবেন এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে বিবেচিত হতে থাকে। শৌখিনদার মানুষের স্ত্রীরা ঘেটুপুত্রকে দেখতেন সতীন হিসেবে। । এমন এক ঘেটুপুত্রই আমার এবারের চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র। ’
২৫ অক্টোবর থেকে নূহাশপল্লীতে শুরু হবে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবির শুটিং। বিশাল ক্যানভাস নিয়ে নির্মিতব্য এ ছবির শুটিংয়ের জন্য নূহাশ পল্লীতে একটি জমিদার বাড়ির সেট ফেলা হয়েছে। ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে জমিদার চরিত্রে অভিনয় করবেন তারিক আনাম খান। ছবির নামভূমিকায় অভিনয়ের জন্য মামুন নামের এক কিশোরকে নির্বাচন করেছেন নির্মাতা। ছবিতে আরো অভিনয় করবেন তমালিকা কর্মকার, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শামীমা নাজনীন, মাসুদ আখন্দ, আবদুল্লাহ রানাসহ অনেকে। নূহাশপল্লী ছাড়াও ছবির শুটিং হবে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানার রাজবাড়িতে ও সুনামগঞ্জে।
হুমায়ূন আহমেদ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’কে তার জীবনের শেষ ছবি হিসেবে অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ অনেক খাটাখাটনির ব্যাপার। বয়সের কারণে এতটা চাপ নেওয়া আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। চলচ্চিত্রের কাজে সময় দিতে গিয়ে আমার লেখালেখিতেও অনেক ব্যাঘাত ঘটে। লেখালেখি করলে খাটাখাটুনির প্রয়োজন পড়ে না। তাই লেখালেখিটাকেই আমি অগ্রাধিকার দিতে চাই।
‘ঘেটুপত্র কমলা’ ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চতুর্থ ছবি। এর আগে তিনি ইমপ্রেস থেকে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ এবং ‘আমার আছে জল’ নির্মাণ করেছেন। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ ও ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবি দুটির স্বত্বও সম্প্রতি গ্রহণ করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এর বাইরে জনপ্রিয় এই ঔপন্যাসিকের কাহিনী নিয়ে ইমপ্রেস
টেলিফিল্মের প্রযোজনায় আরো ৪টি ছবি নির্মিত হয়েছে। ছবিগুলো হচ্ছে ‘দূরত্ব’, ‘সাজঘর’, ‘নিরন্তর’ ও ‘দারুচিনি দ্বীপ’।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬৩০, অক্টোবর ২৩, ২০১০