‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দিয়ে চলচ্চিত্রে নায়ক ফেরদৌসের অভিষেক। বাসু চ্যাটার্জির এই ছবিটিকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়।
চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকারা ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় যুক্ত হন, এটি বেশ পুরনো রীতি। বাংলাদেশের শীর্ষ নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে রাজ্জাক, সোহেল রানা, শাবানা, ববিতা, উজ্জ্বল, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রিয়াজসহ অনেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এসেছেন। এ তালিকায় নতুন সংযোজন ফেরদৌস। চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে ফেরদৌস বলেন, আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। চলচ্চিত্রে আছি এবং চলচ্চিত্রেই থাকতে চাই। অভিনয় করছি অনেক দিন হলো, এবার নতুন পরিচয়ে আমার যাত্রা শুরু হলো। আসলে প্রযোজনায় আসার পরিকল্পনাও দীর্ঘদিনের। নানা ব্যস্ততায় কাজটা শুরু করতে করতে দেরি হয়ে গেল। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’তে কাজ করার সময়ই বাসু চ্যাটার্জি আমাকে ‘এক কাপ চা’-র গল্পটা বলেছিলেন। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল যদি কখনো চলচ্চিত্র নির্মাণে আসি, তাহলে এটা নিয়েই ছবি করব। সেই ইচ্ছের কথা অনেক আগেই বাসু চ্যাটার্জিকে জানিয়ে রেখেছিলাম। তিনি আস্থা নিয়ে ছবির পাণ্ডুলিপিটি আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ তার কাছে। আশা করছি তার সেই আস্থার সম্মান আমি রাখতে পারব। দর্শকদের একটি সুন্দর ছবি উপহার দিতে পারব।
‘এক কাপ চা’ ছবিটি পরিচালনা করছেন তরুণ পরিচালক নইম ইমতিয়াজ নেয়ামূল। এটিই তার প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনা। ছোটপর্দার নির্মাতা হিসেবে এরই মধ্যে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। ‘এক কাপ চা’ ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব নইম ইমতিয়াজ নেয়ামূলের হাতে তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে ফেরদৌস বললেন, তরুণরাই তো যুগে যুগে ভালো কিছু উপহার দিয়ে চলেছে। নেয়ামূলের কাজ সম্পর্কে আমি জানি। ছোটপর্দায় তার অনেক কাজ আমি দেখেছি ও মুগ্ধ হয়েছি। নেয়ামূলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের চিন্তাভাবনার অনেক মিল আছে। কাজটা সে আন্তরিকতার সঙ্গে করবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমি এই ‘ছোট’ পরিচালকের হাতে কাজটা ছেড়ে দিয়ে অনেকটাই নির্ভার।
‘এক কাপ চা’ ছবিতে ফেরদৌসের বিপরীতে অভিনয় করছেন বাংলাদেশের মৌসুমী ও কোলকাতার ঋতুপর্ণা। এই দুই অভিনেত্রীকে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে ফেরদৌস বললেন, ছবিতে তাদের নেওয়ার কারণ হলো এই দুজন আমার বিপরীতে সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাদের সঙ্গে আমার অভিনয়টা জমে ভালো। তাছাড়া দুজনই সুঅভিনেত্রী এবং দুজনেই দর্শকদের পছন্দের তারকা। আমি যখন তাদের দুজনকে ছবিটার গল্পটা শোনাই দুজনই মুগ্ধ হয়ে তাদের কাজ করার ইচ্ছের কথা আমাকে জানান। আমার ধারণা যার যার জায়গায় দুজনেই নিজের সবটুকু ঢেলে চরিত্রকে আকর্ষণীয় করে তুলবেন।
ছবির বিশেষ আকর্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেরদৌস বললেন, আমার ধারণা গান এ ছবির অন্যতম আকর্ষণ। প্রখ্যাত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আমার ছবির জন্য একটি গান লিখেছেন। এই প্রথম তিনি নিজের ছবির বাইরে অন্য কারো ছবির জন্য গান লিখেছেন। ছবির বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মুম্বাইয়ের হরিহরণসহ রুনা লায়লা, হাবিব, মিলা ও ন্যান্সি। আরেকটা বড় চমক হচ্ছে, ছবিতে মৌসুমীর বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে একটা গানে অংশ নিয়েছেন আলমগীর, আঁখি আলমগীর, নিপুণ, সারিকা, ইমন ও নীরব। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এ পর্যন্ত যতটুকু শুটিং হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেরদৌস বললেন, মাত্র ১০ ভাগ শুটিং হয়েছে। যতটুকু কাজ হয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। যেমন চেয়েছি তেমনিই হচ্ছে কাজটা। এখন দেখা যাক সামনে কেমন হয়। ফেরদৌস জানালেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঋতুপর্ণা ‘এক কাপ চা’-এর শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকা আসবেন। নভেম্বরের শেষ নাগাদ ছবিটির শুটিং সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিচালক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘গেরিলা’-তে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস। ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছবিতে আমাকে দেখা যাবে ছোট্ট একটা চরিত্রে। ছবিটি নির্মাণ করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। তিনি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি। আমরা শিল্পীরা কিছু কাজ করি নিজের কমিটমেন্ট থেকে। ছোট চরিত্র নাকি বড় চরিত্র, এখানে এটাকে আমি বড় করে দেখিনি। নিজের কমিটমেন্টের অংশ হিসেবেই ‘গেরিলা’-তে অভিনয় করেছি। ফেরদৌস আরো জানালেন, ‘৬৯ পাতলা খান লেন’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করছেন। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করছেন বিন্দু। ছবিতে আরও অভিনয় করছেন নোবেল। এছাড়াও ঢালিউডের আরো দুটি ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে তার কথা চলছে। এর বাইরে তার হাতে আছে কলকাতার আরো তিনটি ছবির কাজ।
আসছে কোরবানির ঈদে ফেরদৌসকে একটি বিশেষ ভূমিকায় দেখা যাবে। বিটিভির ঈদের বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান আনন্দমেলা উপস্থাপনা করছেন তিনি। এ বিষয়ে বললেন, ছোটবেলায় প্রতি ঈদে খুব আগ্রহের সঙ্গে আনন্দমেলা দেখতাম। কিন্তু আনন্দমেলায় আগের সেই আমেজ এখন আর নেই। বিটিভি কর্তৃপক্ষ এবার সেই আমেজটা নিয়ে আসার জন্য আমাকে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার জন্য অনুরোধ করে। তারা তাদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানায়। আমি সেটা দেখে আমার নিজের পছন্দের কিছু বিষয় যোগ করার জন্য বলি। বিটিভি কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি। আনন্দমেলায় নতুন কিছু উপহার দেওয়ার জন্যই আমি অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি। আগামী ২ ও ৩ নভেম্বর আনন্দমেলা ধারণ করা হবে বলে ফেরদৌস জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৩০, অক্টোবর ২৪, ২০১০