ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

পূর্ণিমার ফেরা...

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১০

এই ঈদে মূলধারার ৫টি ছবির মধ্যে ব্যবসাসফল কোনটি ? না, এখনো হিসেব কষে বলার সময় আসেনি। তবে অনেক দিন পর পূর্ণিমা অভিনীত ছবি ‘পরান যায় জ্বলিয়ারে’ ঘিরে দর্শকদের ছিল বেশ আগ্রহ।

ছবিতে পূর্ণিমার বিপরীতে ছিলেন শাকিব খান। এছাড়া ঈদের নাটক বিটিভির ‘সেই তো আবার’ আর এনটিভির ‘স্বপ্ন’-তে পূর্ণিমাকে দেখা গেছে অনবদ্য ভূমিকায়। সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য নায়িকা পূর্ণিমার ফিটনেস আবারও নজর কেড়েছে অনেকের। এ যেন পূর্ণিমার নতুন করে ফিরে আসা।

১৯৯৮ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে আলোছায়ার ভুবনে পা রেখেছিলেন পূর্ণিমা। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। শুরু থেকেই এগিয়েছেন একটু বাছ-বিচার করে। তাই বারো বছরে সব মিলিয়ে ছবির সংখ্যা একশ ছাড়ায়নি। তাতে কী? অভিনীত ছবির মধ্যে আছে ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘যোদ্ধা’, ‘এ জীবন তোমার আমার’, ‘ধোঁকা’, ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’সহ বেশ কিছু মানসম্পন্ন ছবি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটা সময়ের প্রতিনিধিত্ব করবে এই ছবিগুলো। তাছাড়া সামনে তো আরো সময় আছেই। শাবানার মতোই চলচ্চিত্রে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখেন পূর্ণিমা। তাই ফিটনেস ঠিক রাখতে করে চলেছেন পরিশ্রম। করছেন ডায়েটিং। অভিনয়েও হয়ে উঠেছেন পরিণত।

বারো বছরের পথচলা সম্পর্কে পূর্ণিমার উপলব্ধির কথা জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কেউ যখন আমাকে বলে সব শ্রেণীর দর্শকদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে, তখন এক ধরনের তৃপ্তি পাই। আমি সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটক করেছি, বিজ্ঞাপন করেছি। ক্যারিয়ারের ব্যস্ততম সময়েও আমি ধারাবাহিক নাটক ‘লাল নীল বেগুনী’তে অভিনয় করেছি। এতে সিনেমার দর্শকদের কাছে কদর কমেছে বলে মনে করি না। বরং ছোটপর্দার অনেক দর্শকও আমার ছবি দেখতে সিনেমা হলে এসেছেন। একদিকে আমি ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’র মতো রোমান্টিক ছবি করেছি; অন্যদিকে ‘শাস্তি’, ‘সুভা’-এর মতো সাহিত্যভিত্তিক ছবিতে অভিনয় করেছি। আবার ‘দুর্ধর্ষ সম্রাট’, ‘যুদ্ধ’র মতো অ্যাকশন ছবিতেও কাজ করেছি। এই যে সব ধরনের ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা, এটাকে আমি বড় করে দেখি। পূর্ণিমা আরো বললেন, অভিনেত্রী হিসেবে এক যুগে আমি যা পেয়েছি তাতে আমি আনন্দিত। কাজ করছি, কাজ করা চালিয়ে যেতে চাই। সবাই তো আর সবসময় এক নম্বর পজিশনে থাকে না। এক নম্বর পজিশনে থাকতেই হবে, এ ধরনের কোনো লক্ষ্য বা জেদও আমার নেই। আমি যেভাবে আছি সেভাবেই থাকতে চাই। ভালো ভালো কাজ করতে চাই।

পূর্ণিমা টিভিনাটক বা বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও চলচ্চিত্রকে তার আসল ঠিকানা বলে মনে করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কতো নাটকেই তো অভিনয় করলাম। কিন্তু কয়টা নাটকের কথা দর্শক মনে রেখেছে? অথচ এখনো ‘মনের মাঝে তুমি’ বা ‘হৃদয়ের কথা’ ছবি দর্শক মনে রেখেছে। আসলে চলচ্চিত্রের আবেদনই আলাদা। পূর্ণিমা দুঃখ করে বললেন, সিনেমার নাম শুনে একশ্রেণীর মানুষ বাঁকা হাসি হাসে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, কোনোদিন তারা সিনেমা হলে যায়নি। অন্যদের সঙ্গে হুজুগেই তারা বলে থাকে, সিনেমা ভালো না। সিনেমা হলে না যাওয়া বা সিনেমা না দেখাটা যাদের কাছে আধুনিকতা, তাতের মুখে সিনেমার ভালোমন্দ নিয়ে মন্তব্য মোটেও মানায় না।

ফিল্মি পলিটিক্স বলে একটা কথা আছে, আরো আছে গসিপ-স্ক্যান্ডাল। এগুলো আপনার ক্যারিয়ারকে কতোটুকু প্রভাবিত করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে পূর্ণিমা বললেন, পলিটিক্স আছে সব জায়গাতেই। পলিটিক্স থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হলেও হয়তো আরেক ধরনের পলিটিক্সে জড়াতে হয়। এই পলিটিক্সটা আমি কোনোদিনই বুঝে উঠতে পারি না। তাই বোধ হয় রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’ বা ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ ছবিগুলো সুপারহিট হলেও আমাদের ঘিরে সেভাবে চাহিদা তৈরি হয়নি। আমাদের কাছে ছবি আসেনি। গসিপ-স্ক্যান্ডাল সম্পর্কে পূর্ণিমার মন্তব্য, শোবিজে আমরা যারা আছি তাদের কাছে এসব ক্যারিয়ারেরই অংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণিমার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবস্থা ভালো না। ইন্ডাস্ট্রি এখন এক শাকিব খান নির্ভর। তার সঙ্গে জুটি হিসেবে অপুকে চালানো হচ্ছে। কিন্তু বিকল্প কেউ বেরিয়ে আসছে না। বড় প্রডিউসাররা ফিল্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নতুনদের নিয়ে সিনেমার করার ঝুঁকি অনেক প্রযোজক-পরিচালক নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে দিন দিন সিনেমা হলগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। হলই যদি না থাকে তাহলে সিনেমা চলবে কোথায়! পূর্ণিমা আরো বললেন, নতুন প্রজন্মকে চলচ্চিত্র আকর্ষণ করতে পারছে না। কারণ তারা হিন্দি ছবি দেখে অভ্যস্ত। তারা চকচকে প্রিন্টের ছবি দেখতে চায়। সুন্দর লোকেশন দেখতে চায়। ভালো গান-নাচ দেখতে চায়। তারা তো জানে না কতো সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের সিনেমা তৈরি হয়। ভালো সিনেমার জন্য দরকার ভালো বাজেট। আমাদের সংস্কৃতমনা বিত্তবান মানুষরা চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এগিয়ে না এলে ভালো ছবি বানানো সম্ভব নয়। নতুন প্রজন্মকে চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে দরকার ভালো ছবি আর সিনেমা হলের উন্নয়ন।

এবারের ঈদে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘পরাণ যায় জ্বলিয়ারে’ ছবির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ পূর্ণিমাকে আবারও
নিয়ে এসেছে আলোচনায়। শাকিব খানের পাশে পূর্ণিমাকে নিয়ে অনেক নির্মাতাই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। দর্শকনন্দিত এই নায়িকার হাতে এ মুহূর্তে আছে ১০-১২টি ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শাহ আলম কিরণের ‘মাটির ঠিকানা’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, এফ আই মানিকের ‘জজ ব্যরিস্টার পুলিশ কমিশনার’, কাজী হায়াতের ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘আই লাভ ইউ’, গাজী মাহবুবের ‘রাজা সূর্য খাঁ’, রাজু চৌধুরীর ‘অস্ত্র ছাড়ো কলম ধরো’ প্রভৃতি। এছাড়া আরো বেশ কিছু ছবির কথাবার্তা চলছে। পাশাপাশি দেশের একটি খ্যাতনামা জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপনে ঝলমলে ভঙ্গিতে পূর্ণিমাকে দেখা যাবে শিগগিরই।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮০০, নভেম্বর ২৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।