‘কিং খান লাইভ ইন ঢাকা’ কনসার্ট দেখতে ১০ ডিসেম্বরে শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যেই বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম জনারণ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা ৬টায় ভরে যায় দুপাশের গ্যালারি।
রাত ৮টায় শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এতে বাজিগর, বাদশাহ, জোশ, দিলসে, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, মোহাব্বাতে, ম্যায় হু না, দিল তো পাগল হ্যায়, কাভি খুশি কাভি গাম, কাল হো না হো, ডন, পরদেশ, ওম শান্তি ওম ছবির গানের সঙ্গে অসাধারণ পারফর্ম করেন শাহরুখ খান ও তার দলের শিল্পীরা।
জমকালো এ কনসার্টে বলিউড শিল্পীদের পরিবেশনা শুরু করেন ‘কাটা লাগা’ খ্যাত আইটেমগার্ল শেফালি জরিওয়ালা। ‘কাটা লাগা’ ও ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি ডারলিং তেরে লিয়ে’ গানের সঙ্গে শেফালি জরিওয়ালা ও তার সঙ্গীদের নাচ তাক লাগিয়ে দেয় দর্শকদের। এরপর মঞ্চে আসেন নায়িকা ইশা কোপিকার। তিনি ‘শান হে জানতে নেশা’ গানটির সঙ্গে নেচে অডিয়েন্স মাতিয়ে তোলেন।
হঠাৎ মোটরবাইকে চড়ে কাঁধে গিটার নিয়ে মঞ্চে আসেন নায়ক অর্জুন রামপাল। তিনি মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তখন বসে থাকতে পারেননি। অর্জুন রামপাল ‘রক অন’ ও ‘আগনে পিছে’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় অর্জুন বলেন, ‘ঢাকা কেমন আছে, আমি তোমাদের ভালোবাসি’।
এরপর জমকালো মঞ্চের পেছনের ছোট্ট একটি ঘর থেকে নাটকীয় ভঙ্গিতে নায়িকা রানী মুখার্জি বেরিয়ে আসেন। তখন পুরো স্টেডিয়ামে উঠে করতালির ঝড়। রানীকে দেখে উল্লাসে মেতে উঠে দর্শক। ‘দিল বলে হারিপ্পা’, ‘হাম তুম’, ‘গোরে গোরে ছে ছোড়ে’ ও ‘শাবা শাবা’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করেন তিনি। এরপরই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বাংলা ভাষায় বলেন, ‘আমি আপনাদের রানী। আপনাদের আনন্দ দিতে বাংলাদেশে এসেছি। ’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমি জানতে চাই, এখানে এসে আমরা যে পারফর্ম করছি, তা আপনাদের ভালো লাগছে তো? আমি কি বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে বলতে পারব সবাইকে খুশি করে আসতে পেরেছি?’ বাঙালি নায়িকা রানীর বক্তব্যকে সমস্বরে চিৎকার করে স্বাগত জানায় হাজারো দর্শক।
পৌনে ৯টা দিকে কিং খান কালো আলখাল্লা পরে রাজকীয় ভঙ্গিতে স্টেজে আসেন। ‘আজা মেরি’ আর ‘মারজানি মারজানি’ গানের সঙ্গে তার পরিবেশনায় উত্তাল হয়ে উঠে স্টেডিয়াম। ২৫ হাজার দর্শক ফেটে পড়ে উল্লাসে। খানিকক্ষণ বিরতির পর স্যুট-টাই পরে আবার মঞ্চে আসেন অন্যরকম শাহরুখ। দর্শকদের অভিবাদন জানিয়ে বাংলায় কিং খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ভারতবর্ষ থেকে বয়ে এনেছি অনেক অনেক ভালোবাসা। ’ তারপর বাংলা আর হিন্দি মিশিয়ে বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম মা বলেছিলেন এই সোনার বাংলার কথা। এখানকার আকাশ, বাতাস, মাটি ও মানুষের মন খাঁটি সোনা। আজ এখানে উপস্থিত হয়ে আমি সে কথাটি উপলব্ধি করতে পারছি। ’ তিনি দর্শকদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে কথোপকথন আর হাস্যরসে মেতে উঠেন। হাসি-আনন্দের হিল্লোল উঠে সবার মাঝে।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীতশিল্পী শ্রীধর নেওয়াজের পরিবেশনার পর আবার মঞ্চে আসেন শাহরুখ খান। এবার তিনি রানী মুখার্জিকে সঙ্গে নিয়ে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘তওবা তুমহারে ইয়ে ইশারে’, ‘কোয়ি মিল গ্যায়া’, ‘মিথুয়া ক্যারাইয়ে ধারকান’ গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল কিং খান আর রানী মুখার্জির এই পরিবেশনা।
‘ওম শান্তি ওম’ গানের মধ্য দিয়ে শাহরুখ খান তার মনমাতানো পরিবেশনার ইতি টানেন। মঞ্চ ছাড়ার আগে জানিয়ে যান আবার এ দেশে আসার প্রত্যাশার কথা। রাত সোয়া ১১টায় শেষ হয় বাংলাদেশের এ যাবৎকালের সেরা ও জমকালো কনসার্ট ‘কিং খান লাইভ ইন ঢাকা’।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮১০, ডিসেম্বর ১১, ২০১০