টিভি মিডিয়ায় ২০১০ সালের আলোচিত প্রসঙ্গ ছিল বিজ্ঞাপনের বাড়াবাড়ি। মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে দেশীয় চ্যানেল থেকে অনেক দর্শকই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
নাটক ও টেলিফিল্ম
টিভি চ্যানেলগুলোতে সঙ্গীতানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, রম্য অনুষ্ঠান, টক শো, বাংলা ছায়াছবিসহ নানারকম অনুষ্ঠান প্রচার হলেও বরাবরের মতোই কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নাটক ও টেলিফিল্ম। বিশেষ দিনগুলোতে একক নাটক প্রচার ছাড়া প্রতিটি চ্যানেলে এবারও ছিল ধারাবাহিক নাটকের ছড়াছড়ি। সব মিলিয়ে নাটক প্রচার হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে এটিএনবাংলার ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ ও ‘হাতের লেখা কথা বলে’, চ্যানেল আইয়ের ‘মুকিম ব্রাদার্স’ ও ‘চৈতাপাগল’, এনটিভির ‘গ্রাজুয়েট’ ও ‘মানবজমিন’, বাংলাভিশনের ‘গুলশান এভিনিউ’ ও ‘ফিফটি ফিফটি’, আরটিভির ‘ম্যানপাওয়ার’, একুশে টিভির ‘ললিতা’, দেশটিভির ‘যাও পাখি’ ও ‘ভজকট’ প্রভৃতি দর্শকপ্রিয়তা পায়।
দুই ঈদে টিভিতে একক নাটক যতগুলো প্রচার হয়েছে, বছরের অন্য সময় সব মিলিয়ে একক নাটকের সংখ্যা ততগুলো হবে না। প্রশংসার দাবি রাখে চ্যানেল আই, একুশে টিভি ও দেশ টিভি। কারণ বিজ্ঞাপন ‘মহাবিরতি’র কারণে দর্শক যখন বিরক্ত হয়ে টিভিনাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন, সেই সময় এই তিনটি চ্যানেল সপ্তাহে একটি করে বিরতিহীন একক নাটক প্রচারের উদ্যোগ নেয়। এ ছাড়াও এনটিভিতে রোববারের নাটক শিরোনামে বেশ কিছু মানসম্মন্ন একক নাটক প্রচার হয়েছে।
বছরের বিভিন্ন সময় প্রচার হওয়া আলোচিত একক নাটকের মধ্যে রয়েছে এটিএনবাংলায় প্রচারিত মঈন খান রূপীর ‘হাজার রজনীর গল্প’, অনিমেষ আইচের ‘গণিত মানব’, তৌকীর আহমেদের ‘এন্টিকক’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘আউট অব ফোকাস’; চ্যানেল আইতে প্রচারিত সালাউদ্দিন লাভলুর ‘গন্তব্যের পথে’, মেজবাউর রহমান সুমনের ‘চা অথবা কফির গল্প’ খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘ঋণ শোধ’, রেদোয়ান রনীর ‘অপরাজিতা’; এনটিভিতে প্রচারিত নুরুল আলম আতিকের ‘ডালিম কুমার’, নাঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূলের ‘পানি’, আলভি আহমেদের ‘আলোর মিছিলে ওরা’, আরটিভিতে প্রচার হওয়া নোমান রবিনের ‘পাঙ্খা’, সকাল আহমেদের ‘দ্য সুজ স্টোরি’, সুমন আনোয়ারের ‘ইতি শিউলি’; বাংলাভিশনে প্রচার হওয়া ইফতেখার ফাহমীর ‘হাইওয়ে টু হেভেন’, আশুতোষ সুজনের ‘আছে নাকি নেই’, অনিমেষ আইচের ‘অপরিচিত’; একুশে টিভিতে প্রচারিত কায়সার আহমেদের ‘আমাদের মেহেরজান’, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূলের ‘অমিমাংসিত’ প্রভৃতি।
বছরের আলোচিত টেলিফিল্মের মধ্যে রয়েছে ফেরদৌস হাসানের ‘চোরকাঁটা’, শিহাব শাহীনের ‘অ্যাংকর মফিজ’, শহীদুজ্জামান সেলিমের ‘ট্রাফিক সিগন্যাল ও হলুদ বাতি’, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ধুলোর মানুষ, মানুষের ঘ্রাণ’, সুমন আনোয়ারের ‘আয়েশার ইতিকথা’, মাহফুজ আহমেদের ‘অল দ্য বেস্ট’, গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘কবি ও যন্তর মন্তর’, রেদওয়ান রনীর ‘বেহেলা’ প্রভৃতি।
অভিনেতা-অভিনেত্রী
বছরের প্রথম ছয় মাস টিভি নাটকে সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেতা ছিলেন মোশাররফ করিম, অপূর্ব ও সজল। অভিনেত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক ব্যস্ত ছিলেন প্রভা, তিশা ও বিন্দু। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্কের কাঁদা ছোড়াছুড়ির কারণে পরবর্তীকালে এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন অপূর্ব আর প্রভা। অপূর্ব এখনো কাজ চালিয়ে গেলেও প্রভা এখন নিজেকে মিডিয়া পুরোপুরিই গুটিয়ে নিয়েছেন।
দর্শকের পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে এগিয়ে এসেছেন আরেফীন শুভ, নওশীন, শখ, সারিকা প্রমুখ। নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন চঞ্চল চৌধুরী, তারিন, বন্যা মির্জা, আনিসুর রহমান মিলন, মীর সাব্বির, নোভা, হোমায়রা হিমু প্রমুখ।
ব্যতিক্রমী চরিত্র ২০১০ সালেও জয়া আহসান ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সিনিয়রদের মধ্যে হুমায়ূন ফরীদি, সূবর্ণা মুস্তাফা, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, মাহফুজ আহমেদ এবার তুলনামূলক কম নাটকে অভিনয় করেছেন।
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, রিয়েলিটি ও লাইভ শো
গত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরেও জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’। দুই ঈদে বিটিভির দুই আনন্দমেলা ছিল পুরোপুরো ব্যর্থ প্রচেষ্টা। বিভিন্ন চ্যানেলের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে আমার আমি, যা কিছু প্রথম, হঠাৎ একদিন, স্টাইল অ্যান্ড ফ্যাশন, মিডিয়া ভুবন প্রভৃতি আলোচিত হয়েছে। চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ ধরে রেখেছে তার জনপ্রিয়তা। এ বছর টিভি চ্যানেলগুলোতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান বেশি ছিল, যা দেশপ্রেমের চেতনার জন্য ইতিবাচক। আগের তুলনায় চলতি বছর অনুষ্ঠিত রিয়েলিটি শোগুলো এতটা জনপ্রিয়তা পায় নি। এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম ছিল শুধু ‘ক্ষুদে গানরাজ’ আর ‘মার্কস অলরাউন্ডার’ আয়োজন দুটি। বছরজুড়ে সব চ্যানেলে স্টুডিও লাইভ কনসার্টের আধিক্য ছিল। এসব লাইভ শোতে দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান নির্মাণও হয়েছে এ বছর। অনেক লাইভ অনুষ্ঠানের মধ্যে বছরের শেষ দিকে বৈশাখী টেলিভিশন শাহরুখ খানের কনসার্ট সরাসরি সম্প্রচার করে দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে।
নতুন টিভি চ্যানেল
চলতি বছর অন এয়ারে এসেছে নতুন দুই চ্যানেল, সংবাদভিত্তিক চ্যানেল এটিএন নিউজ এবং বিনোদনভিত্তিক চ্যানেল মোহনা টেলিভিশন। এ ছাড়াও বছর মাছরাঙা টিভি, ইন্ডিপিডেন্ট টিভি, সময় টেলিভিশন চলতি বছর প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০১১-তে এসব চ্যানেলের অন-এয়ারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ০০২০, ডিসেম্বর ৩১, ২০১০