সূর্যোদয়ের রাগে গান ধরে ভীমসেন যোশী
কোমল রেখাবটাকে ভাবলেন দারুণ রূপসী
অসুস্থতার জন্য অনেক দিন রেখাবে রাগ তোলেননি তিনি। কখনই তুলবেন না আর।
হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ছিলেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। কিরানা ঘরনার এই প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতগুরু ২৪ জানুয়ারির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ৮৯ বছর বয়সে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি প্রায় মাসখানেক আগে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে।
অবস্থার একটু উন্নতিও হয়েছিল। এই খবরে আশা জেগেছিল ভক্তদের মনে। কিন্তু ঠেকিয়ে রাখা গেল না বিপত্তি। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি আক্রান্ত হলো কিডনি। অবশেষে চলেই গেলেন তিনি।
২০০৮ সালে ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত বেসরকারি পুরস্কার ‘ভারতরতœ’ খেতাব পাওয়া পণ্ডিতজীর মৃত্যুতে শুধু ভারতই নয়, বিশ্বসঙ্গীতের মহাকাশ থেকে ঝরে গেল এক মহানক্ষত্র।
ভারতের কর্নাটক রাজ্যে এক মারাঠি পরিবারে ভীমসেন জন্মেছিলেন ১৯২২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি। বাবা গুরুরাজ যোশী ছিলেন স্কুলশিক্ষক। সংসারে ১৬ ভাই-বোনের ভেতর ভীমসেন ছিলেন সবার বড়।
ছোটবেলায় ‘ঠুমরি’ শুনে আগ্রহী হয়েছিলেন সঙ্গীতে। তবে ‘খেয়াল’ দিয়েই শুরু হয়েছিল তার সঙ্গীতের চর্চা। ভীমসেনের গুরু ছিলেন সাওয়াই গন্দর্ভ। গুরুজি ছিলেন ‘কিরানা ঘরানা’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা উস্তাদ আবদুল করিম খানের প্রধান শিষ্য। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি অতি শক্তিশালী ধারা হিসেবে এই ঘরানা বেশ আদৃত।
সঙ্গীত শেখার জন্য ভীমসেন ঘর ছেড়েছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে। অনেক ঘুরে এলেন গোয়ালিয়র। বিখ্যাত সরোদবাদক উস্তাদ হাফিজ খানের সহায়তায় ভর্তি হলেন মহারাজের সঙ্গীত স্কুলে। এরপর বছর তিনেক একজন ভালো গুরু সন্ধানে ঘুরে বেড়ান উত্তর ভারত। ছেলের এমন ঘুরে বেড়ানো দেখে ভীমসেনের বাবা তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনলেন। ঘরে আবার শুরু হলো সঙ্গীতচর্চা। গুরু গন্দর্ভের তত্ত্বাবধানে।
১৯৪৩ সালে ভীমসেন এলেন মুম্বাইয়ে। পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার বাসনায়। ভাগ্য সাথেই ছিল তার। হলেন রেডিওর শিল্পী। ১৯ বছর বয়সে প্রথম লাইভ পারফমেন্স। ২২ বছর বয়সে প্রকাশ জীবনের প্রথম অ্যালবাম। ভক্তিমূলক গানের এই অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল বিখ্যাত এইচএমভি।
সফলতার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ভীমসেন চলে এসেছিলেন অনেক দূর। সঙ্গীতে আগ্রহী এক তরুণ হয়েছিলেন সঙ্গীতগুরু। তার মৃত্যুতে তাই শোকাহত সঙ্গীতজগৎ।
বাংলাদেশ সময় ১৮১৯, জানুয়ারি ২৪, ২০১১