এ যেন আমাদের চলচ্চিত্রের সেই সোনালী যুগের স্মৃতিকাব্য। সত্তর ও আশির দশকের সেইসব ঝলমলে মুখ দাঁড়িয়েছেন পাশাপাশি।
ঢালিউডের কিংবদন্তি নায়ক রাজ্জাকের বিয়ের ৫০ বছর পদার্পন ০২ মার্চ বুধবার রাতে তার গুলশানের বাসভবনে চলচ্চিত্র তারকাদের মুখরিত পদচারণায় উদযাপন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানটি আয়োজনে ছিলেন নায়করাজের তিন ছেলে বাপ্পারাজ, বাপ্পী ও সম্রাট এবং মেয়ে ময়না। রাজ্জাক তার চলচ্চিত্র জীবনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের প্রায় সবাইকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সময়ের নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী আর কলাকুশলীরা নায়করাজ ও তার স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে একত্রিত হন। অনুষ্ঠান পরিণত হয় তারকাদের মিলনমেলায়।
সোনালী সময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সোহেল রানা, আলমগীর আর ফারুক বিয়ের ৫০ বছর উপলে নায়করাজকে অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। সোনালী যুগের নায়িকাদের মধ্যে এসেছিলেন শবনম, ববিতা, কবরী, অঞ্জনা, রোজিনা, চম্পা, দিতি প্রমুখ। এই সময়ের নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন আমিন খান, অমিত হাসান, কাজী মারুফ, ওমর সানী, সাহারা, রোমানা ও আরো অনেকে। চরিত্রাভিনেতাদের মধ্যে ছিলেন খলিল, আনোয়ারা, মিজু আহমেদ, আনিস প্রমুখ। অনুষ্ঠান নায়করাজ ও তার স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের মধ্যে এসেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম, কাজী হায়াত, হাবিবুর রহমান, আহমেদ জামান চৌধুরী, খোরশেদ আলম খসরু, মাহফুজুর রহমান এবং আরো অনেকে।
তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং এফডিসির এমডি শাকুর আলা আবদুল মজিদ অনুষ্ঠানে নায়করাজ ও তার স্ত্রী অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত ছিলেন।
বিবাহিত জীবনের ৫০ বছরে পা রাখার অনুভূতির কথা জানিয়ে এসময় নায়করাজ রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, কজন মানুষ বিয়ের ৫০ বছর পালন করতে পারে! আল্লাহ আমাকে সেই সৌভাগ্য দিয়েছেন। সত্যিই আমি আমার সংসার জীবন নিয়ে গর্বিত। কারণ লীর মতো চমৎকার আর উদার মনের একজন মানুষকে আমি জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। তার সহযোগিতা না রপলে আমি এতোদূর আসতে পারতাম না। নিজের ৫০ বছরের দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, হয়তো কেউই বিশ্বাস করবেন না যে দীর্ঘ ৫০ বছরের জীবনে আমরা দুজন কখনোই ঝগড়া করিনি। মান-অভিমান ছিলো। এটা স্বাভাবিক একটি বিষয়। কোন দুঃখ আমাদের জীবনে আমরা আসতে দেইনি। পুরো সংসারকে স্বর্গ করে রেখেছে আমার স্ত্রী লী। তবে আমাদের দুঃখ একটাই, আমার বড় মেয়ে শম্পার মৃত্যু। আমার দুই ছেলে বাপ্পারাজ আর সম্রাট আজ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আমি সবার কাছে আমার সন্তানদের জন্য দোয়া চাইছি।
১৯৬২ সালের ২ মার্চ কলকাতার টালিগঞ্জে খায়রুন্নেসাকে বিয়ে করেছিলেন রাজ্জাক। বিয়ের পরপরই রাজ্জাকের জীবনে একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে । নায়করাজ তখন থেকেই ভালোবেসে স্ত্রীকে লক্ষ্মী বলে ডাকতে শুরু করেন এবং এখনো লক্ষ্মী নামেই ডাকেন। ১৯৭০ সালে ঢাকার গুলশানে বাড়ি বানিয়ে স্ত্রীকে তা উপহার দেন, বাড়ির নাম দেয়া হয় ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’। ১৯৭২ সালে রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘রংবাজ’ ছবিটি প্রযোজনা করে চলচ্চিত্র ব্যবসায় যুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে ঢাকার উত্তরায় গড়ে তোলেন শপিংমল রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স। নিজের প্রতিটি কাজের সঙ্গেই নিজের স্ত্রীর নাম যুক্ত রেখেছেন রাজ্জাক।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৩০, মার্চ ০৩, ২০১১