‘মা’ ছোট্ট একটা শব্দ, সন্তানের কাছে এর আবেদন সীমাহীন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত জীবনের নেপথ্যে থাকে মায়ের বিশাল অবদান ।
শর্মিলা ঠাকুর ও সোহা আলী খান : মা-মেয়ের অনেক কিছুই খুব কমন
বলিউডের একসময়ের পর্দা কাপানো নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর জন্মসূত্রে ঐতিহ্যবাহী ঠাকুর পরিবারের বংশধর। বর্তমানে তিনি পতৌদির নবাবের বেগম। তার মেয়ে বলিউডের নতুন প্রজন্মের নায়িকা সোহা আলী খান। শর্মিলা ঠাকুরের ছেলে বলিউড সুপারস্টার সাইফ আলী খান। মা শর্মিলা ঠাকুর আর মেয়ে সোহা আলী খানের অনেক কিছুই খুব কমন। দুজনেরই ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে বাংলা ছবিতে অভিনয় দিয়ে। আবার দুজনেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন সাহসী পোশাক পরার সৌজন্যে।
শর্মিলা ঠাকুর
ক্যারিয়ার: ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম রূপালী পর্দায় আসেন শর্মিলা ঠাকুর। তারপর ১৯৬৪ সালে ‘কাশ্মীর কি কলি’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা রাখেন। ‘ডিম্পল গার্ল’, ‘আরাধনা’, ‘অমর প্রেম’ ছবিতে রাজেশ খান্নার সঙ্গে তার রোমন্টিক জুটি ভারতীয় দর্শকদের মন জয় করেছিল। শর্মিলা ঠাকুর হিন্দি ও বাংলা মূলধারার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি আর্ট ফিল্মেও অভিনয় করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন: অভিনয় জীবনে খ্যাতির শীর্ষে থাকার সময়ই ক্রিকেটার মনসুর আলী খান পতৌদির সঙ্গে তার প্রেম হয় এবং ১৯৬৪ সালে তারা বিয়ে করেন। যারা বলেন সেলিব্রেটি দম্পতিদের বিবাহিত জীবন সুখের হয়না, তারাএই জুটিকে দেখলে নিশ্চয় লজ্জা পাবেন।
বিতর্ক: শর্মিলা ঠাকুরের ক্যারিয়ারে বিতর্ক তাকে খুব একটা আকড়ে ধরে নি। খুবই সাদামাটা একটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল যখন ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ এ বিকিনি পরে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন। ঠাকুর পরিবারের মেয়ে হয়ে তিনি কি করে অশালীন পোশাক পরলেন, তা নিয়ে অনেকেই তখন কটুক্তি করেছিলেন।
মেয়ে সম্বন্ধে মন্তব্য: শর্মিলা বলেন, ‘সোহা হাজ আ লাইফ অফ হার ওন’। ওর উপরে আমার আস্থা আছে। সোহা এমন কিছুই করবে না, যা পরিবারের জন্য অসম্মান বয়ে আনবে। মা হিসেবে আমি নিশ্চয়ই চাই ও ভাল কিছু করুক। আশি করি সোহা নিশ্চয়ই একদিন ভাল অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাবে।
সোহা আলী খান
ক্যারিয়ার: মায়ের মতো সোহা আলী খানও বাংলা ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০৪ সালে ‘ইতি শ্রীকান্ত’ ছবিতে কমললতার ভূমিকায় প্রথম তার অভিনয়। সেবছরই প্রথম হিন্দি ছবি ‘দিল মাঙ্গে মোর’-এ অভিনয় করেন । সোহা অভিনীত কয়েকটি ছবি প্রশংসিত হলেও ‘রং দে বাসন্তী’ ছাড়া তার ঝুলিতে কোন হিট ছবি নেই। তাই মায়ের মতো সোহার ক্যারিয়ার এখনও সাফল্যের চূড়া ছোয়নি।
ব্যক্তিগত জীবন: সোহা সবসময়ই বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন। দেিনর অভিনেতা সিদ্ধার্থের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে এবং সিদ্ধার্থ তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে সোহাকে বিয়ে করবেন, এমন গুঞ্জন মিডিয়ায় শোনা গেলেও সোহার তরফ থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে আবার গুজব ওঠে, কুনাল কাপুরের সঙ্গে সোহার মন নেয়া দেয়া চলছে বলে। তবে সোহা সবসময় পারিবারিক মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। বিয়ের েেত্রও পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন বলে জানিয়েছেন।
বিতর্ক: সোহার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হল, একটি বিশেষ পত্রিকার পাতায় লঁজেরি পরা তার প্রায় নগ্ন একটি ছবি প্রকাশিত হওয়া। যে মেয়ে চরিত্রের প্রয়োজনেও একসময় খোলামেলা পোশাক পড়তে রাজি হননি। তিনি কি করে এতোটা খোলামেলা পোষাকে ফটোশ্যুট করলেন তা নিয়েই সবাই অবাক।
মা সম্পর্কে মন্তব্য: সোহা বলেন,আমি এখনও পর্যন্ত মায়ের কথাতেই চলি, যেকোন সিদ্ধান্তে মায়ের মতামতকে গুরুত্ব দিই। মা আমাকে অনেক সহায়তা করেন। সমালোচকরা কি বলেন তার চেয়েও মা বিষয়টি কিভাবে দেখেন, সেটা আমার কাছে বেশি গুরুত্ব পায়। আমি মায়ের মতই বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
তনুজা এবং কাজল-তানিশা: যেখানে স্বপ্নের পূর্ণতা
বলিউডের একসময়ের ব্যস্ত নায়িকা স্বপ্ন দেখতেন, একদিন তিনি ইন্ডাষ্ট্রি টপ পজিশনে পৌছে যাবেন। বহু সুপারহিট ছবি উপহার দিলেও টপ পজিশন থেকে তিনি বরাবরই ছিলেন বেশ দূরে। মায়ের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করেন কাজল। বেশ কিছুদিন তিনি অবস্থান করেছেন টপচার্টের শীর্ষ অবস্থানে। যদিও তার ছোটবোন তানিশা এখন পর্যন্ত রয়ে গেছেন দ্বিতীয় সারির নায়িকা।
তনুজা
ক্যারিয়ার: ১৯৫০ সালে দিদি নতুনের সাথে ছোটচরিত্রে অভিনয় করলেও তনুজা পুরোপুরি নায়িকা হিসেবে নাম লেখান ‘ছবিলি’র মাধ্যমে। তনুজার মা শোভনা সমর্থ ছিলেন এই ফিল্মের পরিচালক। ‘হাতি মেরা সাথী’, ‘দো চোর’, ‘মেরে জীবনসাথি’ ইত্যাদি ছবিতে তনুজার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। ১৯৬৩ সালে উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘দেয়া-নেয়া’ ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে মুখ দেখান তনুজা। উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে জুটি বেধে অনেক হিট বাংলা ছবি করেছেন তনুজা। ‘রাজকুমারী’, ‘তিন ভূবনের পাড়ে’, ‘প্রথম কদম ফুল’ ছবিগুলো এর মধ্যে অন্যতম।
ব্যক্তিগত জীবন: ১৯৭২ সালে প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের ছোট ছেলে সোমু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘একবার মুসকুরা দো’ ছবির সেটে আলাপ হয় তনুজার। প্রথম দেখাতেই পরস্পরের প্রেমে পড়েন তারা। ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন তনুজা ও সমু। তবে দুই মেয়ে কাজল ও তানিশাল জন্মের কিছুদিন পরে তারা আলাদা হয়ে যান।
বিতর্ক: অভিনয় জীবনে তেমন কোন বির্তক নেই তনুজার।
মেয়েদের সম্বন্ধে মন্তব্য: আমার মেয়েরা একেবারেই স্বাধীন। ওদের কোন বিষয়েই আমি নাক গলাই না। তবে পরামর্শ দেই ভালকিছু করার।
কাজল
ক্যরিয়ার: বলিউডের এযাৎকালের অন্যতম সফল অভিনেত্রী কাজল ১৯৯২ সালে ‘বেখুদি’ দিয়ে বলিউডে পা রাখেন। প্রথম ছবিই সুপার ফপ। কালো গায়ের রং, গোলগাল চেহারা, জঘন্য ড্রেসিং সেন্স নিয়ে কোন নায়িকাই বলিউডে টিকে থাকতে পারেননি। কাজলই বা কেন ব্যাতিক্রম হবেন ! অভিনেত্রী তনুজার মেয়ে, শোভনা-শশধর মুখোপাধ্যায়ের নাতনী; এমন বংশপরিচয় নামের সাথে লেভেল হিসেবে থাকা সত্ত্বেও কাজল কিছুই করতে পারছিলেন না। তবে সব হিসেব পাল্টে গেল ‘বাজিগর’ মুক্তি পাবার পর। শাহরুখের সঙ্গে সেই যে জুটি বেঁধে কাজ করা শুরু করলেন, তারপর অভিনয় দতা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন বলিউডের এক নম্বর নায়িকা হিসেবে। ‘করন অর্জুন’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কভি খুশি কভি গম’ বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। কাজলই বলিউডের একমাত্র নায়িকা যাকে ভারতীয় দর্শক বিয়ের পর নায়িকা হিসেবে গ্রহন করেছে। ‘ফানা’, ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিগুলোর সাফল্য তারই প্রমান।
ব্যক্তিগত জীবন: ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারী অভিনেতা অজয় দেবগনকে বিয়ে করেন কাজল। কাজল-অজয় নিজেদেও বিবাহিত জীবনে অত্যন্ত সুখী। দুই সন্তান নিয়ে তাদের এখন সুখে শান্তিতে বসবাস।
বিতর্ক: কাজলের অভিনয় জীবনে বিতর্কের কোন অস্তিত্ব ছিল না। বিয়ের আগে শাহরুখের সাঙ্গে রোমান্টিক জুটি গড়লেও তাদের সাথে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। অজয়ের সঙ্গে বিয়ের পর অভিনয় একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মা সম্পর্কে মন্তব্য: মা সম্পর্কে কাজল বলেন মা হল আমার সকল কাজের প্রেরনা। আমি মাকে অনেক ভালবাসি।
তনিশা:
ক্যারিয়ার: তনুজার ছোট মেয়ে তনিশা অভিনয় জীবন একেবারেই সুপারফপ। দিদির ধারেকাছে যাওয়া তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত একটা সুপারহিট ছবি করতে পারেননি। ১৯৯৫ সালে চ্যানেল ভি-এ ‘বিপিএল ওয়ে’ নামে একটি শো করতেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ‘সরকার’ ছবিতে ছোট একটা চরিত্রে অভিনয় করেন। যশ চোপড়াদের ছবি ‘নীল এ্যান্ড নিকি’তে খোলামেলা পোশাকে অভিনয় করে কিছুটা হৈচৈ ফেলে দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ব্যর্থ নায়িকার তকমা লাগিয়ে তনিশা এখন কেটে পড়েছেন বলিউড থেকে।
ব্যক্তিগত জীবন: যশ চোপড়ার ছোট ছেলে উদয় চোপড়ার সঙ্গে ‘নীল এ্যান্ড নিকি’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন তনিশা। দুজনের পরিবারই বলিউডের প্রভাবশালী তাই প্রেম করতে বাঁধা ছিল না। তাই তারা ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে প্রেমের জলে ডুব মেরেছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে বাঁধ সাধে রানী-আদিত্য চোপড়ার প্রেম। মিডিয়ার সকলেই জানেন রানী-কাজলের বরফকঠিন সম্পর্কের কথা। তাই আদিত্যতে বিয়ে করে রাণী হবে চোপড়া পরিবারের বড় বউ আর তনিশা ছোট,এমন সম্ভাবনা দেখতেই সম্পর্কের ইতি টেনে দেন তনিশা।
বিতর্ক: ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ না পেয়ে যখন আর কিছুই করার ছিল না। তখনই তনিশা যশ চোপড়াদের ছবি ‘নীল অ্যান্ড নিকি’তে স্বল্প বসনা হয়ে অভিনয় করেন। নিজেকে নিকি চরিত্রে দেখানোর জন্য হয়েছিলেন পাতলা, চিনচিনে। কিন্তু তখনও ভারতীয় দর্শক সাইজ জিরো ফিগারের সাথে পরিচিত হননি। তাই তনিশার এমন অশীল ড্রেসআপ আর পাতলা শরীর দর্শকদের আর্কষন করেনি বরং সমালোচিত হয়েছেন।
মা সম্পর্কে: মা আমাদেরকে যেমন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন তেমনি মাটিতে পা রেখে চলতেও শিখিয়েছেন। মা আমাদের আদর্শ।
ববিতা কাপুর এবং কারিশমা-কারিনা কাপুর : মায়ের প্রচেষ্টা আর মেয়েদের সাফল্য
নিজের ফিল্মি ক্যারিয়ার খুব বেশি ঝকঝকে না হলেও, কারিশমা-কারিনার ক্যারিয়ার সোনায় বাঁধাতে চেষ্টার কমতি করেননি ববিতা। তাই তো আজ তার মেয়েরা বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। স্বামী রনধীর কাপুরের সঙ্গে আলাদা থাকার পর থেকেই ববিতা ঠিক করে ফেলেছিলেন, দুই মেয়েকে একেবারে নিজের মনের মতো করে মানুষ করবেন। রনধীর কিংবা কাপুর পরিবারের কারও ছায়া পড়তে দিবেন না। মেয়েদের উপর বরাবরই নজর রেখেছেন। তাই তো এখনো দুইবোন কারিশমা আর কারিনা মা অন্ত:প্রান।
ববিতা
ক্যারিয়ার: ১৯৬৭ সালে সঞ্জয় খানের বিপরীতে ‘দস লাখ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন। অবশ্য তার ফিল্মী ক্যারিয়ার খুব দী র্ঘস্থায়ী হয়নি। আট বছরে সবমিলিয়ে ১৯টি ছবিতে অভিনয় করেই ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
ব্যাক্তিগত জীবন: ক্যারিয়ারের মত ববিতার বিবাহিত জীবনটাও ছিল নস্থায়ী। অভিনেত্রীকে পরিবারের বউমা করে নিতে রাজকাপুরের যথেষ্ট আপত্তি ছিল। তারপর রনধীরের জিদের কারনে তাদের মধ্যে বিয়ে হয় এবং বিয়ের পর ববিতা অভিনয় ছেড়ে দেন। কিন্তু বিবাহিত জীবনে নানা ঝামেলার কারনে তাদের দুজনের সম্পর্ক একেবারে তলানীতে গিয়ে নামে। শেষপর্যন্ত তারা দুজন আলাদা থাকতে শুরু করেন। অবশেষে দুইমেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলে পরে এখন তাদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই সহজ ও মধুর।
বিতর্ক: অভিনয় জীবনে ববিতাকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি না হলেও পারিবারিক জীবনে ববিতা বেশ কিছু মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন। মেয়েদের বিয়েতে কাপুর পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ জানাবেন না এবং বেশি বয়সের পাত্র হিসেবে সাইফকে তার পছন্দ নয়, এমন মন্তব্য করে তিনি আলোচিত হয়েছেন।
মেয়েদের সম্পর্কে: লোলো এবং বেবো দুই মেয়েই আমার চোখের মণি। ওদের জীবনের যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ওরাই আমাকে দিয়েছে। এব্যাপারে অনেকেই আমাকে অনেক কথা বললেও আমি কিছুই পরোয়া করি না যতদিন মেয়েরা আমার সঙ্গে আছে।
কারিশমা
ক্যারিয়ার: ১৯৯১ সালে ‘প্রেম কয়েদি’ ছবি দিয়ে বলিউডে ডেব্যু হয় কারিশমার। কাপুর পরিবারের মেয়ে হলেও তিনি বাড়তি কোন সুবিধা পাননি। শুরুর দিকে ফপ ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার খুঁড়িয়ে খুড়িঁয়ে চললেও ১৯৯৬ সালে ‘রাজা হিন্দুস্থানি’ মুক্তির পর দৃশ্যপট বদলে যায়। এ ছবিতে ‘আরতি সেহগাল’ চরিত্রে অভিনয় করে একাধিক পুরষ্কার ঝুলিতে ভরার পাশাপাশি সমালোচকদেরও সাধুবাদ পান। এরপর কারিশমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমির, সালমান, ঋত্বিকের সাথে অভিনয় করে ভালই সুনাম অর্জন করেছেন। তবে বিয়ের পর ছোট বোন ক্যারিনাকে ব্রেক দিয়ে চলচ্চিত্র থেকে গুটিয়ে নেওয়া শুরু করেন কারিশমা।
ব্যক্তিগত জীবন: বচ্চন পরিবারের সন্তান অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে প্রেম এবং অ্যাংগেজমেন্ট হলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেন ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুরকে। বিবাহিত জীবন কয়েকবার ছাড়াছাড়ির মত পর্যায়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একসাথেই ঘর করছেন তারা। মেয়ে সামাইরাকে নিয়েই তাদের ছোট সংসার।
বিতর্ক: অভিষেক বচ্চনকে নিয়ে কারিশমা জল কম ঘোলা করেননি। বিয়ে করতে করতেও শেষ পর্যন্ত করেননি। এছাড়াও অজয় দেবগনের সঙ্গেও তার প্রেমের গুজব ছড়িয়েছিল। বিবাহিত জীবনেও বিভিন্ন সময়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।
কারিনা
ক্যারিয়ার: দিদির দেখানো পথেই দৌড়াচ্ছেন কারিনা। তবে মা-দিদির চেয়ে বেবো অনেক বেশি ডেয়ারিং। ২০০০ সালে অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে ‘রিফিউজি’ ছবি দিয়ে ক্যারিয়ারের শুরু। নিজের গ্যামার ও ফিগারের কারণে বেশিরভাগ রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করলেও ব্যতিক্রম ধারার চরিত্রেও তিনি সফল। ‘ওমকারা’, ‘চামেলি’ ছবিগুলো তারই প্রমান। চরিত্রের প্রয়োজনে সাইজ জিরো ফিগার করে এসেছেন লাইমলাইটে। কোন না কোন কারনে প্রতিদিনই সংবাদের শিরোনামে থাকেন চঞ্চল স্বভাবের এই নায়িকা। সুপারফপ ছবির মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করা এই নায়িকা এখন বলিউডের অন্যতন প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
ব্যক্তিগত জীবন: ‘কাউকে পরোয়া করিনা’- এটাই কারিনার জীবনের মূলমন্ত্র। ক্যারিয়ারের শুরুতে ঋত্বিকের সঙ্গে কাঁচা প্রেম করলেও শহীদ কাপুরকে নিয়ে ছিলেন অনেকদিন। রেস্তোরায় তারা সকলের সামনে লিপ কিস করলেন এবং সে ছবি পত্রিকায় ছাঁপা হলে পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে হুমকি দিলেন। তবে এখন শহীদ কাপুরকে ছুড়ে ফেলে ছোটা নবাবের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। স্বপ্ন দেখছেন সংসার করার।
বির্তক: বির্তক ও কারিনা পরস্পর যেন সমার্থক। আজ এর নামে বদনাম তো কাল ওকে নিয়ে ডেটিং করে নিয়মিতই আলোচনায় আসছেন। সমসাময়িক নায়িকাদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করেন। এই তো কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে প্রিয়াংকা চোপড়ার সঙ্গে দিয়েছিলেন ঝগড়া বাঁধিয়ে, শেষপর্যন্ত কিং খানের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হয়।
মা সম্পর্কে: মা হল আমার ফ্যাশন আইকন। ম কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। তার পরামর্শেই আমার এতদূরে আসা এবং বিখ্যাত হওয়া।
হেমা মালিনী এবং এষা দেওল: মায়ের পেছনেই মেয়ের ছোটে চলা
ড্রিমগার্ল খ্যাত হেমা মালিনী বরাবরই চেয়েছেন তাঁর বড় মেয়ে এষার ফিল্মি ক্যারিয়ার যেন তার যাত্রাপথের চেয়ে দীর্ঘ হয়। কিন্তু এষা নিজেকে এখনও পর্যন্ত মায়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেননি। হেমা কোনকিছুতে বেশি বাড়াবাড়ি না করলেও এষার অনেক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিজেই দিয়েছেন।
হেমা মালিনী
ক্যারিয়ার: ১৯৬৮ সালে রাজ কাপুরের বিপরীতে ‘সপনো কা সওদাগার’ ছবির মাধ্যমে হেমা বলিউডে পা রাখেন। সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দি-তামিল ছবিতে অভিনয় করেছেন হেমা। ১৯৯২ সালে ‘দিল আশনা হ্যায়’ দিয়ে পরিচালক হিসেবেও নাম লিখিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবন: সঞ্জীবকুমার ও জিতেন্দ্রের সঙ্গে হালকা প্রেম করেছিলেন হেমা। কিন্তু হৃদয়টা তিনি দিয়ে রেখেছেন ধর্মেন্দ্রকে। তাঁদের সংসারে দুই মেয়ে এষা এবং অহনা। বিয়ে নিয়ে অনেক জলঘোলা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি ভালই সামলাচ্ছেন সংসার। ওদিকে ধর্মেন্দ্রও পাঞ্জাব ও মুম্বাইয়ের দুই সংসার দিব্যি সামলাচ্ছেন।
বিতর্ক: ধর্মেন্দ্রকে যখন বিয়ে করেন হেমা, তখন ধর্মেন্দ্র বিবাহিত। প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স না দিয়ে ধর্মেন্দ্র কি করে হেমাকে বিয়ে করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ২০০৪ সালে,যখন ধর্মেন্দ্র লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। তখন সবাই জানতে পারেন ১৯৭৯ সালের ২১ আগষ্ট ধর্মেন্দ্র ও হেমামালিনী যথাক্রমে দেলওয়ার খান এবং আয়েশা বিবি নামে মুসলিম মতে বিয়ে করেন।
মেয়ে সম্বন্ধে: এষা জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে। সে এখন বড় হয়েছে। সে নিজেই এখন তার মতামতকে প্রাধান্য দিতে পারে। ঘরে বসে মেয়ের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে পাগল হওয়ার মত মা আমি নই।
এষা দেওল
ক্যারিয়ার: ২০০০ সালে ‘কোই মেরে দিল সে পুছে’ ছবি দিয়ে এষার বলিউড যাত্রা শুরু। ছবি সুপারডুপার ফপ। মায়ের মত মুখশ্রী হলেও বলিউডপ্রেমীরা এষাকে ভালভাবে গ্রহন করেননি। তবে এষা লাইমলাইটে আসেন ‘ধুম’ ছবিতে বোল্ড লুক এবং বিকিনি শটের জন্য। ‘যুবায়’ তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত একক নায়িকা হিসেবে কোন হিট ছবি উপহার দিতে পারেননি তিনি।
ব্যক্তিগত জীবন: ক্যারিয়ারের শুরুতেই এষা সহঅভিনেতা আফতাব শিবদাসনির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। পরবর্তীতে হেমা মালিনীর কঠোর মনোভাবের কারনে তাদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে।
বিতর্ক : বাবা-দাদাদের সুনামকে নষ্ট করে এষা বিকিনি পড়ে ধুম ছবিতে অভিনয় করেন। ফলে পরিবারের সবার চুশূল হয়েছিলেন। এখন অবশ্য সব কিছু গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।
মা সম্পর্কে: মা আমাকে নিয়ে অনেক খুশি। আমি মায়ের সিদ্ধান্ত কে প্রাধান্য দেই। কিন্তু এখন আমি নিজেই আমার ডিসিশন নেই এবং মা সেটাকে রেসপেক্ট করেন।
শেষ কথা
বলিউডের বিখ্যাত ও সুন্দরী মায়েদের কন্যারা অন্যদের চেয়ে একধাঁপ অগ্রসর রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত হবার পথে। মেয়েদের কেউ কেউ হয়ত এরই মধ্যে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন মায়ের সমপর্যায়ে, অনেকেই আবার মায়ের জশ ও খ্যাতিকে ছাড়িয়ে যাবেন। তবে মেয়েরা বরাবরই মায়েদের কাছে কৃতজ্ঞ। গর্ববোধ করেন এমন মায়ের সন্তান হয়ে।
বাংলাদেশ সময় ১৮১০, মার্চ ১২, ২০১১