ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আসছে পহেলা বৈশাখে

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১১

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু , একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা শহরের অসংখ্য গেরিলা লড়াইয়ে নের্তৃত্ব দিয়েছেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনকে আলোকিত করতে পালন করে চলেছেন অগ্রণী ভূমিকা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র  ‘গেরিলা’। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিটি দর্শকের সামনে আসছে  পহেলা বৈশাখ। এবার বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজন ‘গেরিলা’ নিয়ে।

স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু গত চার দশকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তখন প্রত্যাশা বেড়ে যায় । মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও নাট্য-ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ নিয়ে প্রত্যাশা তাই অনেক বেশি। ছবির শুটিং পরবর্তী এডিটিং ও অন্যন্য টেকনিক্যাল কাজ শেষ করে সম্প্রতি নির্মাতা ভারতের মুম্বাই থেকে দেশে ফিরেছেন। সেন্সর বোর্ডে ছবির প্রিন্ট জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী পহেলা বৈশাখ ‘গেরিলা’ ছবিটি সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

‘গেরিলা’ ছবিটির চিত্রনাট্য সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাসের পটভূমিতে রচিত হলেও এতে যুক্ত হয়েছে নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফের মুক্তিযুদ্ধের কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস এবং মুক্তিযুদ্ধে আমার প্রত্য অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘গেরিলা’ ছবিটি। চিত্রনাট্য করেছি যৌথভাবে আমি ও এবাদুর রহমান। আমি মুক্তিযুদ্ধের একটি বাস্তব চিত্র ছবিতে তুলে ধরতে চেয়েছি। এতো বছর পর মুক্তিযুদ্ধের ছবি বানিয়েছি আজকের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আবেদন তুলে ধরার জন্য।

‘গেরিলা’ ছবিটি প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জুলাই ও আগস্ট মাসের কাহিনী থাকছে এই ছবিতে। তবে ছবির আসল বিষয় হচ্ছে,  জুলাই মাসের চার পাঁচ দিনের ঘটনা। এ ছবিকে সত্য ঘটনাগুলোকে যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত করে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি আমি। একজন পরিচালক হিসেবে সত্য ঘটনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে যতটুকু স্বাধীনতা নেওয় প্রয়োজন সেটুকুই আমি নিয়েছি। এতে বানানো কিছু নেই। একটা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সত্যের অধিক সত্য দিয়ে কিছু করতে হয়। আমি তাই করেছি। এখানে ইতিহাসের অনেক কিছু আছে। তবে এটি ইতিহাস নয়। ঐ সময়টাকে ভিত্তি করে ইতিহাসকে নিয়ে একটি গল্প করার চেষ্টা করেছি। এই গল্পটা আমার নিজের জীবনে দেখা বাস্তব গল্প।

তিনি আরো বলেন, ঢাকার ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কিছু চিত্র এতে থাকছে। বন্ধু আর সহযোদ্ধাদের নিয়ে আমার করা কিছু অপারেশনের চিত্রায়নও আছে। ছবিতে আলতাফ মাহমুদের চরিত্রটি এসেছে। হাবিবুল আলম বীর প্রতীক, বিচিত্রার সম্পাদক শাহদাত চৌধুরী প্রমুখ চরিত্র এসেছে। এছাড়াও ছবিতে নারী যোদ্ধাদের লড়াইয়ের চিত্রও তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে। ছবিতে মনিকা দে, সুলতানা কামাল, জাকিয়া, রেশমা আসমা, আনজুম কুসুম, লায়লা, শাহীন, লিনু হকের মতো অনেক নারীই যে মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাও দেখা যাবে। কাহিনীতে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্টের সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এসেছে পরিস্কারভাবে। সেদিন পাকস্তানি আর্মি ঢাকায় গেরিলাদের সন্ধান পাওয়ার শহরের বিভিন্ন জায়গায় রেইড দেয়। হানাদাররা গেরিলাদের খুঁজে বের করার জন্য অনেক সাধারণ মানুষের সবকিছু তছনছ করে দেয়। সেই ভয়াবহতাও উঠে এসেছে এই ছবিতে।  

মঞ্চে অসংখ্য সফল নাটকের নির্দেশক ও স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের যীশু’-এর নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ ‘গেরিলা’ নির্মাণের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বাংলানিউজকে বললেন, ছবি নির্মাণ করা কঠিন কাজ৷ আর ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছি ৷ বিশাল আয়োজন ছিল ছবিটি নিয়ে ৷ ১২০টি লোকেশনে শুটিং করেছি ৷ সারা দেশে ঘুরে ঘুরে শুটিং করেছি ৷ যুদ্ধাবস্থার বাংলাদেশ বানাতে গিয়ে কাজটি অনেক কঠিন হয়ে গেছে। ঢাকা শহরও আগের মতো নেই। চল্লিশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের চিত্র এক নয়। ফলে ক্যামেরা ধরলেই বর্তমান বাংলাদেশ চলে এসেছে। তবুও চেষ্টা ছিল চিত্রটা যেন একাত্তরের মতোই হয়। এ জন্য আমাদের চেষ্টার কমতি ছিল না ৷ তবে প্রিন্ট দেখে এখন মনে হয়েছে, আরো কিছু হয়তো করা যেত ৷

সরকারী অনুদানে নির্মিত ছবি  ‘গেরিলা’। তবে অনুদানের স্বল্প টাকায় বিশাল ক্যানভাসে এরকম একটি ছবি বানানো অসম্ভব। ছবিটি বানাতে যে খরচ হয়েছে, তার তুলনায় সরকারী অনুদান ছিল যথেষ্টই অপ্রতুল। ছবিটির জন্য সরকার ১৯ লাখ কুড়ি হাজার টাকা নগদ অনুদান দেয় আর এফডিসির দশ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়। অথচ প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে, ‘গেরিলা’র নির্মাণ কাজ শেষ করতে খরচ হয়েছে এই টাকার প্রায় দশ গুণ। এ বিষয়ে  নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বললেন, যেকোনো ভালো ছবি নির্মাণ করতে গেলেই প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয় ৷ অনুদানের টাকা,  ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এবং আমার নিজস্ব অর্থ সবকিছু দিয়েও আমি পুরো ছবির কাজ শেষ করতে পারি নি। এজন্য আমার শুভাকাঙ্খীদের কাছে ধার-কর্জ করতে হয়েছে। হয়তো দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাকে আরো ঋণগ্রস্ত হতে হবে। তবু ছবিটি দর্শকদের ভালো লাগলেই আমি স্বার্থক হব।

‘গেরিলা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন সহস্রাধিক শিল্পী। এ ছবিতে সংলাপ আছে এমন চরিত্রের সংখ্যাই ৯০টি। ছবিটির প্রধান প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস,  শতাব্দী ওয়াদুদ, এটিএম শামসুজ্জামান, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুম আজিজ, শম্পা রেজা ওমর আয়াজ অনি, শ্যামল প্রমুখ। ছবির নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্বে রয়েছেন এষা ইউসুফ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সমীরণ দত্ত। এছাড়াও শিল্প নির্দেশনায় অনিমেষ আইচ, সঙ্গীত পরিচালনা ও পোশাক পরিকল্পনায় শিমূল ইউসুফ, রূপসজ্জা উপদেষ্টা হিসেবে কানিজ আলমাস খান দায়িত্ব পালন করেছেন।

সবার ভালো কিছু করার মহৎ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে ‘গেরিলা’। ছবিটির জন্য দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েকটা দিন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৩০, ১৫ মার্চ ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।