ইশরাত জাহান চৈতী, লাক্স চ্যানেল আই ২০০৮-এর খেতাব বিজয়ী। অনেকের মনেই প্রশ্ন, অন্য বিজয়ীদের তুলনায় তিনি কি একটু পিছিয়ে পড়েছেন ? কেনো তাকে মিডিয়ায় সেভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? খোলা মনে তিনি দিয়েছেন এসব প্রশ্নের জবাব।
কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘মধুমতি’। শাহ্জাহান চৌধুরী পরিচালিত এ ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের বাংলা নববর্ষে। অনেকদিন পর এ ছবিতে দেখা যাবে জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজকে। তার বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমেই চৈতির চলচ্চিত্রে অভিষেক হতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শুরুতেই চৈতি বললেন, রিযাজ একজন সুপারস্টার আর আমি একেবারেই নবীণ এক অভিনেত্রী। স্বাভাবিক কারণেই শুরুতে আমি খানিকটা জড়তায় ভুগছিলাম। বিয়াজ ভাইয়ের প্রাণখোলা ব্যবহারের কারণে সেই জড়তা কাটিয়ে তুলতে আমার খুব বেশি সময় লাগে নি। নবীন অভিনেত্রী হিসেবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। কিন্তু কখনো তাকে বিরক্ত হতে দেখি নি। একবারের জায়গায় তিনবার এসে তিনি শট দিয়েছেন। তার দেয়া টিপস আমার খুব কাজে লেগেছে।
‘মধুমতি’ ছবির শুটিংয়র কথা জানিয়ে চৈতী বললেন, একবছরেরও বেশি সময় লেগেছে ছবিটি শেষ করতে। ঋতু বৈচিত্র্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তুলে ধরার জন্য নানা জায়গায় হয়েছে ছবির শুটিং। কখনো নবাবগঞ্জ, কখনো বিক্রমপুর, কখনো বা পুবাইল। গ্রামবাংলার সৌন্দর্য খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। শুটিংয়ের সময় এমন অনেক মজার মজার ঘটনা ঘটেছে যে বলে শেষ করা যাবে না।
ছবিতে চৈতী অভিনয় করছেন মিনারা চরিত্র। এই সিরিয়াস চরিত্রটির সঙ্গে চৈতীর ব্যক্তিজীবনের খুব একটা মিল নেই। গম্ভির প্রকৃতির চরিত্রটি করার জন্য তাকে করতে হয়েছে হোমওয়ার্ক। অভিনয় দিয়ে পরিচালকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলেও সমস্যা হয় ডাবিংয়ের সময়। এ প্রসঙ্গে চৈতী বললেন, আমার কণ্ঠ বেশ চিকন। ডাবিংয়ে গিয়ে আমার মনে হলো চরিত্রানুযায়ী কন্ঠে গাম্ভীর্য আসছে না। একপর্যায়ে পরিচালককে আমি অনুরোধ জানাই অন্য কাউকে দিয়ে ডাবিং করানোর জন্য। কিন্তু অন্যের ডাবিং হলে অভিনয়টা ভালো লাগবে না বলে আমাকেই তা করতে হয়েছে। তবে ডাবিংয়ের আগে আমাকে কণ্ঠস্বর নিয়ে অনেক কসরত করতে হয়েছে। ডাবিং শেষ করার পর মনে হয়েছে, স্বার্থক আমার পরিশ্রম।
‘মধুমতি’ ছবিটি নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে চৈতী বললেন, এটি গ্রামীণ পটভূতিতে নির্মিত সাহিত্যনির্ভর একটি বক্তব্যধর্মী ছবি। এ ধরণের ছবির বানিজ্যিক সাফল্যের সম্ভাবনা কম। তবু আমার মনে হয়, ছবিটি যারা দেখতে আসবেন তাদের ভালো লাগবে। আর দর্শকেরা যদি আমার অভিনয় পছন্দ করেন, তবেই নিজেকে স্বার্থক মনে করবো। চলচ্চিত্র নিয়ে চৈতীর ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন, বড়পর্দায় নিয়মিত অভিনয় করার ইচ্ছে আমার নেই। ছোটপর্দাতেই নিজেকে আমি বেশি মানানসই বলে মনে করি। টিভিমিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করার ফাঁকে ভালো গল্পের রুচিশীল চলচ্চিত্রে সুযোগ পেলে আমি অভিনয় করতে চাই।
লাক্স-চ্যানেল আই খেতাব বিজয়ী অন্যদের তুলনায় চৈতী কি খানিকটা পিছিয়ে পড়েছেন? তাকে মিডিয়ায় সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না কেনো? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখনো পড়াশোনা করছি। শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটিতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ফোর্থ ইয়ারের ছাত্রী আমি। পড়াশোনাকেই আমি বর্তমানে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। পড়াশোনা শেষ হলে অভিনয়টাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই। তাই বলে অন্যদের তুলনায় খুবএকটা পিছিয়ে পড়েছি বলে মনে করি না। আমি নিয়মিতই কাজ করছি। তবে আমার উল্লেখযোগ্য অনেক কাজই এখনো আছে অন-এয়ারের অপেক্ষায়। তাছাড়া পিছিয়ে পড়া বা এগিয়ে যাওয়া, এটা ভাবার সময় আমার এখনো আসে নি বলে মনে করি।
ছোটপর্দায় একপর্বের নাটকের পাশাপাশি বর্তমানে চৈতী এটিএন বাংলা চ্যানেলের ‘হাতের লেখা কথা বলে’, চ্যানেল আইয়ের ‘ফানুস’ আর একুশে টিভির ‘ইকরাসের আকাশ’ প্রভৃতি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন।
এবারের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি চৈতীর একেবারেই অন্যরকম। কারণটা তো এরই মধ্যে সবার জানা হয়ে গেছে। চৈতী চান পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে বসে ‘মধুমতি’ ছবিটি দেখতে। চৈত্রদিনের শেষ দিনগুলোতে চৈতী প্রিয়মানুষদের নিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ বরণের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় ১৬৩০, এপ্রিল ০৭, ২০১১