পহেলা বৈশাখ থেকে রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলছে মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘গেরিলা’। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত এই ছবিটি নির্মাণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বরেণ্য নাট্য-ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হলেও ছবিটিতে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ তার মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ঢাকা ও তার আশপাশের রণাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধাদের সেই সময়ের বাস্তব চিত্র ‘গেরিলা’ ছবিটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায় ঢাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা খোকন, আজাদ, রুমি, আলম, শাহাদাতের মতো কিংবদন্তি গেরিলা যোদ্ধা প্রতিচ্ছবি।
ছবির প্রধান চরিত্র বিলকিসের মাধ্যমে নাসির উদ্দীন ইউসুফ তার যুদ্ধ-জীবনের অভিজ্ঞতা ও মনোভাব তুলে ধরতে চেয়েছেন বলে জানান। বিলকিস চরিত্রে জয়া আহসানের অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ পরিচালক নিজেও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছোটপর্দার নাটকে বহুমুখি নানা চরিত্রে অভিনয় করে জয়া আহসান নিজের অভিনয়ের ক্ষমতার প্রমাণ রেখেছেন। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েই তাকে ‘গেরিলা’ ছবির প্রধান চরিত্রে কাস্ট করা হয়। জয়া শুটিংয়ের সময় ভুলে গিয়েছিলেন নিজের পরিচয়, হয়ে উঠেছিলেন একাত্তরের বিলকিস। চরিত্রটি উপলব্ধি করে তিনি একাকার হয়ে যেতে পেরেছেন। আমি তার অভিনয়ে সন্তুষ্ট।
‘গেরিলা’ ছবিতে বিলকিস চরিত্রে অভিনয় করা প্রসঙ্গে জয়া আহসান বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখি নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা বুঝি। আমাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন তার মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, অভিনেত্রী হিসেবে আমি গর্ব অনুভব করি। সেই সম্মান রাখার জন্য শুটিংয়ের প্রথম দিন থেকেই ছিল আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা।
ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে জয়া আহসান বলেন, অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় আমার প্রস্তুতি। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাসটি বেশ কয়েকবার পড়ি। চেনাজানা অনেকের কাছে শুনতে চেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের গল্প। কথা বলেছি অনেক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। ছবির পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ নিজেও ছিলেন একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার অনেক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি বার বার।
‘গেরিলা’ ছবিতে নিজের অভিনয় নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন জয়া আহসান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছবিটি দেখার পর মনে হয়েছে আরো অনেক কিছু করা যেতে পারতো। এই জায়গাটা অন্যভাবে করলে ভালো হতো, ঐ জায়গাটায় এক্সপ্রেশন আরেকভাবে দিলে ভালো হতো। আসলে সব শিল্পীর-ই বোধহয় এ ধরণের একটা অতৃপ্তি রয়েই যায়।
ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন করেছেন ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, মিরানা জামান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুম আজিজ, শতাব্দী ওয়াদুদ, আজাদ আবুল কালাম, শম্পা রেজা, আহমেদ রুবেল, এসএম মহসীন, জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, কচি খন্দকার, কামাল বায়েজিদ, সাজ্জাদ আহমেদ রাজীব, গোলাম মাওলা শ্যামল, ওমর আইয়াজ অনি, এরফান মৃধা শিবলু প্রমূখ।
মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘গেরিলা’ দেখতে পহেলা বৈশাখ থেকেই সিনেমা হলে দর্শক সমাগম উল্লেখ করার মতো। ছবিটি বর্তমানে একযোগে চলছে ঢাকার বসুন্ধরা সিটির ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’, ‘বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড’ ও ‘অভিসার’; টঙ্গীর ‘চম্পাকলি’, শ্রীপুরের ‘চন্দ্রিমা’, ময়মনসিংহের ‘পুরবী’, শেরপুরের ‘লিখন’, খুলনার ‘সঙ্গীতা’, রাজশাহীর ‘রাজতিলক’, দিনাজপুরের ‘মডার্ন’, নওগাঁর ‘তাজ’, সিরাজগঞ্জের ‘মৌসুমী’ এবং রংপুরের ‘শাপলা’ প্রেক্ষাগৃহে।
বাংলাদেশ সময় ১৬১০, এপ্রিল ১৯, ২০১১