মুনমুন, নামেই তার আছে জোড়া চাঁদ। তবে শুধু নামে নয়, কাজেও তিনি রেখেছেন মেধার ছোঁয়া।
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৬-এর প্রতিযোগিতায় চতুর্থ হওয়ার মাধ্যমে সেই যে আলোর পথে চলা শুরু হয়েছিল দিনে দিনে তা আরও আলোকিত হয়ে উঠছে। হৃদয়ছোঁয়া অভিনয়, প্রাণবন্ত উপস্থাপনা আর নৃত্যের ছন্দে মুনমুন যেন পৌঁছে গেছেন চন্দ্রালোকে। চলছে তার নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টা।
মিস্টি হাসির মেয়ে মুনমুনের পুরো নাম রুমানা মালিক। ক্যামেরার সঙ্গে তার সখ্যতা সেই এতোটুকু বয়স থেকে। মুনমুন যখন ক্লাস ফাইভের ছাত্রী, সেই সময়ই পাশের বাড়ির এক বিজ্ঞাপন নির্মাতার চোখে পড়ে যান। ছোট্ট মুনমুনকে মডেল করে নির্মাণ করেন একটি লাচ্ছা সেমাইয়ের বিজ্ঞাপন। এরপর আরও কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও মুনমুন লাইম লাইটে আসেন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৬-এর মাধ্যমে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মুনমুন হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী অবলম্বনে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবিতে অভিনয় করে সবার কাড়েন। এ ছবিতে যে চরিত্রটিতে মুনমুন অভিনয় করেন সেটি তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। কিন্তু অভিনয় নৈপুণ্যে অতি সাধারণ একটি চরিত্রকে তিনি জীবন্ত করে তোলেন। মুনমুন অবশ্য তার প্রথম নাটক ‘বাতাসের খাঁচা’-তেই দক্ষতার ছোঁয়া রেখেছিলেন। শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির বিপরীতে অভিনয় ‘মেহুলী ও ইতির গল্প’ নাটকেও তিনি ছিলেন সপ্রতিভ। মুনমুনের ক্যরিয়ারের উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘বাতাসের খাঁচা’,অরুণ চৌধুরীর ‘আগুনের আলো, আশরাফি মিঠুর ‘দৈনিক তোলপাড়’ ও ‘উজান স্রোতের ঢেউ’ এবং আফসানা মিমির ‘ডলস হাউজ’, কৌশিক শংকর দাসের ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমের গল্প’ প্রভৃতি।
অভিনয়ে মুনমুনের তুলনামূলক কম উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে এখন আমি এমবিএ করছি। কোনো ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হয়। সেই সময়টা বের করা আমার জন্য কঠিন। তাই একপর্বের নাটকে আমাকে বেশি দেখা যায়। তাছাড়া উপস্থাপনায় আমি একটু বেশি সময় দিচ্ছি। কারণ উপস্থাপনার জন্য ডাক পাচ্ছি বেশি। তবে ভালো নাটকে কাজ করার সূযোগ এলে আমি তা ছাড়তে রাজি নই।
উপস্থাপনায় মুনমুন যোগ করেছেন নিজস্ব স্টাইল। বিভিন্ন রিয়েলিটি শো’র পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর অনুষ্ঠানও নিয়মিত তিনি উপস্থাপনা করছেন। মুনমুনই একমাত্র উপস্থাপক, যিনি পরপর চারবার লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ইভেন্টের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপস্থাপক হিসেবে তার অভিষেক হয়। এরপর একে একে উপস্থাপনা করেছেন বাংলাভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আমার আমি’, এনটিভির রিয়েলিটি শো ‘মার্কস অলরাউন্ডার’ ও বৈশাখী টেলিভিশনের ‘শুভ বিবাহ’। বর্তমানে তাকে বিবিসি বাংলার ইংরেজি শেখার মজার অনুষ্ঠান ‘খেলতে খেলতে ইংরেজি শিক্ষা’ সঞ্চালনে দেখা যাচ্ছে।
উপস্থাপনায় কি করে এতো সপ্রতিভ থাকেন? উত্তরে মুনমুন তার চিরাচরিত মিষ্টি হাসি হেসে বলেন, নিজেকে সবসময় চেষ্টা করি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে। সবশ্রেণীর দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই কথা বলি। চেষ্টা করি অনুষ্ঠানের আমেজ বুঝে নিজের মতো করে তা দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে। কোন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে বেশি ভাল লেগেছে? উত্তরে মুনমুন বলেন, অবশ্যই লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার ইভেন্ট। এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব আমার জন্য ভীষন চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ আমি নিজে একসময় এই রিয়েলিটি শোর প্রতিযোগী ছিলাম আর এখন নিজেই প্রতিযোগীদের দর্শকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। পরপর চারবার এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতে পারায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
নিজের উপস্থাপনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুনমুন আরো উল্লেখ করলেন বাংলাভিশনের ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানটির কথা। তিনি বলেন, আমি উপস্থাপনার দায়িত্ব পাওয়ার আগে ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানটি করতেন অপি করিমের মতো একজন সুপারস্টার। অপি আপু’র জায়গায় আমার উপস্থাপনা করার বিষয়টি ছিল একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হাতে নেয়ার মতই। আমি মনে করি, সেই চ্যালেঞ্জ আমি অনেকখানি উতরিয়ে গেছি। মাঝে কিছুদিন বিরতির পর মুনমুন আবারও ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ফিরেছেন।
বিবিসি জানালার ইংরেজি শেখার অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে মুনমুনের মন্তব্য হলো, এটি আমাকে সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি নিয়ে গেছে। অনুষ্ঠানটির ধরন খুবই মজার। আমি নিজেও এ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে আনন্দ পাই।
রুমানা মালিক মুনমুন ছোটবেলা থেকেই গান আর নাচ শিখেছেন। এতোটুকু বয়স থেকেই তরঙ্গ ললিতকলা একাডেমীতে চিত্রা সুলতানার কাছে যেতেন গান শিখতেআর নাচ শিখতে যেতেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে। তবে নাচ-গান দুটোই তিনি আপতত একান্ত নিজের জন্য তুলে রেখেছেন। অভিনয় আর উপস্থাপনাতেই নিজেকে মেলে ধরতে চান মুনমুন।
নামের সঙ্গে চন্দ্রালোকের একটা যোগাযোগ থাকলেও মুনমুন অনেক বাস্তববাদী। প্রেম-ভালোবাসা থেকে তাই মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার নিয়েই এখন তার যতো ভাবনা। বিয়ের ব্যাপারে তার মন্তব্য হলো, আগে পড়াশোনা শেষ করি। নিজেকে আরো শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাই, তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। তবে এই ভাবনাটা আমি নিজে ভাবতে চাই না, দায়িত্বটা আমি অভিভাবকদের উপরই ছেড়ে দিতে চাই।
বাংলাদেশ সময় ১৬৪০, এপ্রিল ২৪, ২০১১