দূরবীনে চোখ রাখলে বহুদূর দেখা যায় । বহুদূর যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে তারুণ্যের ছন্দে গড়ে তোলা ব্যান্ড ‘দূরবীন’।
ব্যান্ডটির লাইন আপেও আছে ব্যতিক্রম। আমাদের দেশের ব্যান্ডগুলোতে সদস্য সংখ্যা থাকে চার বা পাঁচ। অথচ দূরবীন ব্যান্ডের সংখ্যা এগারো। যার মধ্যে চারজন আছেন ভোকাল। একটি ব্যান্ডে চারজন ভোকালিস্ট একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া মোটেও সহজ কথা নয়। চার ভোকালের প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা পরিচিতি। এগারো সদস্যের মধ্যে দূরবীন ব্যান্ডের চার ভোকালকে নিয়ে বাংলানিউজের আজকের আয়োজন।
দূরবীন ব্যান্ডের অন্যতম ভোকাল এবং দলের প্রধান শহীদ। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। পরিবারকে ফাঁকি দিয়ে গানের চর্চা করতেন। পড়াশোনার জন্য চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসেন। একসময় খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন যে, গান নিয়েই তাকে থাকতে হবে। শহীদের মামা নিয়াজ মাহমুদ সে সময় সোলস ব্যান্ডের ম্যানেজার ছিলেন। সেই সুবাদে সোলসের সঙ্গে শহীদের একধরণের সখ্যতা গড়ে ওঠে। তখন সোলস ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হত শহীদের। ২০০২ সালে এমবিএ’র শেষ করে এক পর্যায়ে শহীদ নিজেই একটি ব্যান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাব্বির আর নয়নকে নিয়ে শুরু করলেন দূরবীন নামে নতুন একটি ব্যান্ড। এই তিনজন সদস্য নিয়ে দূরবীন ব্যান্ড প্রথম দিকটায় শুধু বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আর মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করত। তাদের সেই সময়ের অন্যতম স্মৃতি হল ধানমন্ডির আবহানী মাঠে গান করা। দলের সবাই একত্রিত হয়ে রসখানে চলত গানের প্র্যাকটিস। ‘সেদিন শেষ বিকেলে’ গানটাই বেশি গাওয়া হত তাদের। এক সময় জনপ্রিয় গীতিকার শফিক তুহিন তাদের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করার জন্য পরামর্শ দিলেন। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হল অ্যালবামের জন্য গান কম্পোজিশনের কাজ। সাব্বিরের ৩টি, নয়নের ৩টি আর শহীদের ৪টি গান নিয়ে ২০০৬ সালে বের হল দূরবীনের প্রথম অ্যালবাম ‘দূরবীন’।
প্রথম অ্যালবামেই দূরবীন ব্যান্ডের গান কুড়িয়ে পায় অনেকের প্রশংসা । এই অ্যালবামে স্থান পায় ‘সেদিন শেষ বিকেলে’ গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এতে ব্যান্ডের সদস্যদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে যায়। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় দূরবীনের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘দূরবীন ২.০১’। এ অ্যালবামটিতে শহীদের গাওয়া ‘স্বপ্ন ডানা’ গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এ গানটির জন্য শহীদ সিজেএফবি পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এ ছাড়াও ২০০৮ সালে রেডিও ফূর্তির এক হাজার গানের মধ্যে দর্শক জনপ্রিয়তার সেরা দশে জায়গা করে নেয়। ব্যান্ডের পাশাপাশি শহীদের দুইটি একক অ্যালবামও বের করেছেন । এর মধ্যে ‘বৃষ্টির গান’ অ্যালবামটি বেশ আলোচিত হয়। এবারের বাংলা নববর্ষে ফুয়াদ এবং রুমীর সঙ্গে করা তার নীলাম্বরী অ্যালবামটিও বাজারে ইতিমধ্যে আলোড়ন তুলেছে।
দূরবীন ব্যান্ডের অন্যতম ভোকাল এবং সংগীতায়োজক আরফিন রুমী। রুমীর সঙ্গে শহীদের পরিচয় ২০০৩ সাল থেকে। দূরবীনের দ্বিতীয় অ্যালবাম বের করার ব্যাপারে শহীদ রুমীর কাছে সাহায্য চাইলেন। রুমী তাতে রাজি হয়ে যান। দূরবীনের ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান ‘স্বপ্ন ডানা’এর কম্পোজিশন রুমীর করা। এই গানটির জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবার পর রুমীও দূরবীন ব্যান্ডের একজন সদস্য হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত হন।
গানের জগতে আসা প্রসঙ্গে রুমী বলেন, একটা স্টেজ শো করতে গিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একদিন তিনি তাদের বাসায় নিয়ে গেলেন। তারপর হাবিবকে ডেকে বললেন, ছেলেটা খুব ভালো গায়। কাজে লাগাতে পারিস। হাবিব ভাই আমার গান শুনে বেশ পছন্দ করলেন। তার পর থেকেই হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে জিঙ্গেলসহ অন্যান্য কাজ নিয়মিত করেছি।
একসময় হাবিবের মাধ্যমে রুমীর পরিচয় হয় জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান ফুয়াদের সঙ্গে। ফুয়াদও রুমীকে কাজে লাগান। ২০০৭ সালে বের হয় আরফিন রুমীর প্রথম একক অ্যালবাম। প্রথম অ্যালবামেই রুমী বাজিমাত করেন। এরপর দ্বিতীয় একক ‘এসোনা’ অ্যালবামের মাধ্যমে নিজের সঙ্গীত প্রতিভাকে তিনি মেলে ধরেন। সংগীতায়োজক হিসেবেও আরফিন রুমী এ পর্যন্ত ডজন খানেক অ্যালবামে কাজ করেছেন। সংগীতাঙ্গনে নিজের একটা ভাল অবস্থান তৈরি করেছেন আরফিন রুমী।
দূরবীনের অন্যতম সদস্য এবং রিদম গিটারিস্ট কাজী শুভ। বগুড়ার ছেলে কাজী শুভ প্রায়ই আড্ডা দিতেন ধানমন্ডি মাঠে। আড্ডার এক পর্যায়ে পরিচয় হয় দূরবীনের সদস্যদের সঙ্গে। শহীদের প্রস্তাবে পরবর্তীতে তিনি দূরবীন ব্যান্ডে যোগ দেন। দূরবীনে কাজ করার পাশাপাশি বেরিয়েছে কাজী শুভর প্রথম একক অ্যালবাম ‘সাদামাটা’। এই অ্যালবামটিও নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
দূরবীন ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য এবং গিটারিস্ট আইয়ুব শাহরিয়ার। কাজী শুভর মতোই আড্ডার এক পর্যায়ে তার পরিচয় হয় দূরবীনের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে। একসময় তিনিও যুক্ত হন দূরবীনের সঙ্গে। নিজের একক অ্যালবাম না থাকলেও ব্যান্ডের আরেক সদস্য কাজী শুভর সঙ্গে একটি ডুয়েট অ্যালবাম কাজ চলছে।
দূরবীন ব্যান্ডের সদস্যরা সম্প্রতি ‘ধানমন্ডি আটের-এ’ নামে একটি ডিজিটাল ছবির গান কম্পোজিশনের কাজ শেষ করেছে। বাংলাদেশের কোনো ব্যান্ডের ছবির জন্য গান তৈরি করার ব্যাপারটি দূরবীন প্রথম শুরু করলো।
১১ সদস্যের দূরবীনের বর্তমান লাইন আপ হলো -
শহীদ : ভোকাল, আরফিন রুমী : ভোকাল ও মিউজিক কাম্পোজার, কাজী শুভ : ভোকাল ও রিদম গিটার, ফাহাদ : লিড গিটার , আইয়ুব শাহরিয়ার : ভোকাল, ফয়সাল : ভোকাল, জনি : ড্রামার, সজিব : বেজ গিটারিস্ট, মামুন : পারকেশান, শান্ত : বেহালা, সবুজ : তবলা, কামরুল : বাঁশি।
বাংলাদেশ সময় ১৫২০, এপ্রিল ২৮, ২০১১