‘নাটক হোক শ্রেণী সংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার’ এই আদর্শ নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় নাট্যদল আরণ্যক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মহান মে দিবসে দলপ্রধান বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের কাছে বাংলানিউজ জানতে চেয়েছিল, আরণ্যকের নাটকে মেহনতি মানুষের কথা কতটুকু প্রতিফলিত হয়? মিডিয়াতে মেহনতি মানুষের কথা কীভাবে উঠে আসছে?
শুরুতেই মামুনুর রশীদ জানালেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মহান মে দিবস উপলক্ষে আরণ্যক নাট্যদল পালন করছে বিশেষ কর্মসূচি।
একজন মেহনতি মানুষ কদম আলী। তার জীবন বঞ্চনার গল্প নিয়ে মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় নাটক ‘ওরা কদম আলী’। এটি ছিল আরণ্যকের প্রথমদিকের একটি প্রযোজনা। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তিত বিশ্ব-প্রেক্ষাপটে আরণ্যকের নাটকে মেহনতি মানুষ উঠে আসছে কিনা জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বললেন, আমরা আমাদের আদর্শের প্রতি এখনো বিশ্বস্থ। এখনো আমাদের নাটকে আমরা মেহনতি ও শোষিত মানুষের কথা বলার চেষ্টা করি। আমাদের এই সময়ের দুটো নাটক হলো ‘রাঢ়াঙ’ ও ‘চের সাইকেল’। দুটো নাটকেই শ্রমজীবি মানুষই হলো মূল প্রতিপাদ্য। তিনি আরো বলেন, আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সারাবিশ্বে শ্রেণী সংগ্রামের চেতনায় ক্ষয় ধরতে শুরু করে। তবু আমরা এখনও নাটককে শ্রেণী সংগ্রামের হাতিয়ার মনে করি। স্বপ্ন দেখি আবার দুনিয়ার মজদূর জেগে উঠবে। গড়ে তুলবে জুলুম মুক্ত সমাজ। স্বপ্ন নিয়েই তো আমাদের বেৎচে থাকা।
আমাদের চলচ্চিত্র ও টিভিনাটকে মেহনতি মানুষের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই বলে মনে করেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, মিডিয়ায় মেহনতি মানুষ বরাবরই উপেক্ষিত। বানিজ্যিক চলচ্চিত্র মেহনতি মানুষকে বিনোদন দিতে নির্মিত হয়। সেখানে তারা দর্শক, বানিজ্যের ক্ষেত্র। টাকার বিনিময়ে বিনোদিত হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রে শ্রমজীবি মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় না। শ্রমজীবি মানুষদের নিয়ে টিভিনাটকও তৈরি হয় খুব কম। আসলে এখন সারাবিশ্বের যে পরিস্থিতি সেখানে কৃষক-শ্রমিকের রাজনীতি করারই তো কোনো অধিকার নেই। যারা রাজনীতি করতে পারে না, যাদের কণামাত্র ক্ষমতা নেই; তাদের কথা বলা বা শোনার মতো সময় কই ক্ষমতাবানদের!
মহান মে দিবস পালন প্রসঙ্গে মামুমুনুর রশীদ বললেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণী বৈশাখ বা অন্য বিশেষ দিনগুলো যেভাবে উদযাপন করে মে দিবসে তাদের সেরকম সম্পৃক্ততা নেই। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে মে দিবসের মূল্যবোধ আর সংগ্রামী চেতনা পৌঁছে দেবার চেষ্টা থেকেই আরণ্যক প্রতিবছর মে দিবসটি পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ সময় ১৯২০, এপ্রিল ৩০,২০১১